খাদ্যনিরাপত্তা: আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা

আমিনুল ইসলাম মিলন

রাত পোহালেই একটি পরিবারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে খাদ্য উপাদানটির, তা হলো কিছু পরিমাণ আটা বা ময়দা। ঘুম থেকে উঠেই একজন গৃহিণীর প্রধান কাজ পরিবারের সদস্যদের জন্য নাশতা বানানো। ধনীর অট্টালিকা থেকে গরিবের পর্ণ কুটির পর্যন্ত এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় এখন আর খুব একটা পান্তা খাওয়া হয় না। তিনবেলা ভাত খাওয়ার রেওয়াজও দিন দিন কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে চিড়া-মুড়ি-খই দিয়ে প্রাতরাশ সারার দিনও এখন গতপ্রায়। এখন রুটি-পরোটায় সরগরম থাকে গ্রামের হাটবাজার। সঙ্গে থাকে পাউরুটি, বনরুটি, কেকসহ আটা-ময়দা দ্বারা প্রস্তুত খাদ্যসামগ্রী। কিন্তু রুটি-পরোটা-কেক বানাতে যে আটা বা গমের প্রয়োজন, তা উৎপাদনে বাংলাদেশের চিত্রটি কেমন, একটু অনুসন্ধান করা যেতে পারে।

গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ সাল থেকে ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গম চাষের প্রমাণ পাওয়া যায়। এটি ভারতবর্ষে চালের পরে দ্বিতীয় খাদ্যশস্য হিসেবে স্বীকৃত। এর পুষ্টিমান বেশি এবং বহু রকম খাদ্য তৈরিতে এটি ব্যবহার হয়। বোরো ধান এবং শীতকালীন অন্যান্য ফসলের তুলনায় গম আবাদ করা সুবিধাজনক। যেমন পানি কম লাগে, রোগ পোকামাকড়ের আক্রমণ কম, পরিবেশবান্ধব ইত্যাদি। বর্তমানে দেশে ৭০ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে গম উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১১ দশমিক ৫৩ লাখ টন। গমের বহু ব্যবহার মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর চাহিদার পরিমাণ প্রায় ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও কৃষক কর্তৃক গমের উচ্চফলনশীল নতুন জাত আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল গ্রহণের ফলে সম্প্রতি গমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন দশমিক ২৮ টনে উন্নীত হয়েছে। এটি সত্ত্বেও দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে সারা দেশে গমের উৎপাদনশীলতা আরো বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন পরিবর্তনশীল জলবায়ু সহনশীল আধুনিক জাত ফসল ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যাপক প্রচলন।

দেশে গমের আবাদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদন। ২০০৬-০৭ থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত ১০ বছরে শস্যটির উৎপাদন বেড়েছে ৮২ দশমিক শতাংশ। অন্যদিকে আবাদ বেড়েছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে গম উৎপাদন হয় দশমিক ৪৯ লাখ টন, যা ২০১৮-১৯ সালে ১১ দশমিক ৫০ লাখ টনে উন্নীত হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, এক দশক ধরে ক্রমাগত গম উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ।

এক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থারও রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। বিশেষ করে বাংলাদেশে গম উৎপাদনে মেক্সিকোভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেইজ অ্যান্ড হুইট ইমপ্রুভমেন্ট সেন্টারের (সিমিট) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৯৮২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে গম ভুট্টার উন্নত জাত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের বিশেষ করে বিএআরআইয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সিমিট আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) মতো কনসালটেটিভ গ্রুপ অব ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচার রিসার্চ (সিআইজিএআর)-ভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এটি একটি অলাভজনক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রশিক্ষণ সংস্থা। পৃথিবীর সব উন্নয়নশীল দেশে শত শত সরকারি বেসরকারি গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ভুট্টা গমভিত্তিক শস্যবিন্যাসের টেকসই উৎপাদন এবং লাভ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য পুষ্টিনিরাপত্তা উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়নে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন