ঘুষের ঝুঁকি সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

রাষ্ট্রীয় সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে সুশাসনের ঘাটতিরই প্রতিফলন

সম্প্রতি প্রকাশিত বৈশ্বিক ঘুষ ঝুঁকি সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় ঘুষের লেনদেনে বাংলাদেশের শীর্ষ অবস্থান সত্যিই উদ্বেগজনক এবং এটি ঘুষ প্রতিরোধে বিরাজমান আমাদের গভীরতর দায়মুক্তির সংস্কৃতি স্বচ্ছতা ঘাটতির বিষয়টিই তুলে ধরে। জন-আলোচনা নীতিনির্ধারণী মহলে ঘুষের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পেলেওট্রেস ব্রাইবারি রিস্ক ম্যাট্রিক্সশীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বরং এটি আরো কিছুটা বেড়েছে। ব্যবসা বা বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারের অতিরিক্ত মিথস্ক্রিয়তা, ঘুষবিরোধী বাধা ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে স্বচ্ছতা এবং নাগরিক সমাজের নজরদারির সক্ষমতা চার মানদণ্ডের সমন্বিত ভারিত স্কোরের আলোকে আলোচ্য প্রতিবেদনে ২০০টি দেশের ঘুষ ঝুঁকি সূচক মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৮তম। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো এমনকি অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জর্জরিত আফগানিস্তানের অবস্থানও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। দেশে ঘুষ দুর্নীতির একই ধরনের বিব্রতকর বা অস্বস্তিকর চিত্র বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ দুর্নীতি ধারণা সূচক প্রতিবেদনেও প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে ২০১৮ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৩তম অবস্থানে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আলোচ্য সংস্থার মূল্যায়নে অব্যবহিত-পূর্ববর্তী দশকে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় তৃতীয় এবং ১৭তম অবস্থানের মধ্যে থেকেছে। থেকে দেশে ঘুষ-অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপকতা সহজেই অনুমেয়।

দেশের সেবা খাতের সর্বত্র ঘুষের লেনদেন এতটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে যে অনেকেই এটিকে আর ঘুষ হিসেবে বিবেচনা করেন না; বরং তারা এটিকে দেখেন স্পিড মানি হিসেবে। টিআইবির সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ঘুষ লেনদেন হয়েছে আনুমানিক ১০৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন টাকা, যা ওই অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের দশমিক শতাংশ। বৈধ সেবা পেতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, ভূমি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ রাষ্ট্রীয় সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে ঘুষ দিতে হয়। শুধু কৃষক, জেলে, পরিবহন শ্রমিক, ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের মালিক নন; রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখা প্রবাসী বাংলাদেশীরাও নানাভাবে ঘুষের ভুক্তভোগী হয়েছেন, হচ্ছেন। এটি হতাশাজনক যে মানুষ বিভিন্নভাবে দায়মুক্তি পাওয়া দুর্নীতিগ্রস্ত সেবাপ্রদায়কের কাছে এক অর্থে নিজেদের সমর্পণে বাধ্য হচ্ছে। এর প্রধান কারণ ঘুষের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। ফলে বিনা মূল্যে বৈধ সেবা প্রাপ্তির সর্বসাধারণের অধিকার যেমন ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তেমনি এর প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে উন্নয়নের সুফলে। কাজেই এর বিস্তার কঠোর হাতে রোধ করার সময় এসেছে।

অর্থনীতিতে ঘুষ লেনদেনের মতো দুর্নীতি সংঘটনের নেতিবাচক প্রভাব বহুমুখী। অভ্যন্তরীণভাবে এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে তোলে এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র নতুন উদ্যোগ বা ব্যবসা চালুর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। আর আন্তর্জাতিকভাবে এটি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং শক্তিশালী করপোরেট সুশাসন চর্চাকারী খ্যাতিমান বিদেশী কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে। আমরা যখন বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি, তখন অন্যতমউচ্চঘুষ ঝুঁকিরদেশ হিসেবে চিত্রায়িত হওয়ার বিষয়টি আমাদের এতদিনের উন্নয়ন প্রচেষ্টাবাহিত অর্জন সাফল্যকে পরাভূত করবে বৈকি। তাই বিষয়টিকে হেলায় নেয়ার সুযোগ নেই।

চলতি মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঘুষ তথা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি ঘোষণা করেছেন। প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্রিয়তা আগের চেয়ে বেড়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সম্মিলিত পরিকল্পনার ঘাটতি স্পষ্ট। ঘুষ লেনদেন বন্ধ করতে হলে সরকারকে অবশ্যই একটি সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করতে

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন