অপিওয়েড সংকট নিয়ে চলমান একটি মামলায় জনসন অ্যান্ড জনসনের (জেঅ্যান্ডজে) বিরুদ্ধে জরিমানা কমিয়েছেন মার্কিন অঙ্গরাজ্য ওকলাহোমার বিচারক থাদ বাল্কম্যান। অপিওয়েড মহামারী সৃষ্টির দায়ে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিটিকে ৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার জরিমানা করেছেন তিনি, যা আগের রায়ের চেয়ে ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার কম। আগস্টে একই বিচারক জেঅ্যান্ডজেকে জরিমানা করেছিলেন ৫৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। খবর রয়টার্স।
প্রসঙ্গত, প্রতারণামূলক বিপণন ও আরো বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে প্রায় দুই যুগ ধরে অপিওয়েড সংকট তৈরির দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি ব্যথানাশক ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে জাতীয়ভাবে ২ হাজার ৭০০টি মামলা করা হয়। ভয়াবহ অপিওয়েড মহামারী সৃষ্টির দায়ে দেশটির বিভিন্ন রাজ্য, কাউন্টি ও শহরে এসব মামলা করা হয়। ওকলাহোমা রাজ্যের নরম্যান শহরের ক্লেভল্যান্ড কাউন্টি ডিস্ট্রিক্টের উল্লিখিত রায় ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে প্রথম।
এদিকে বিচারকের গাণিতিক ভুলের কারণে আগের রায়ে জেঅ্যান্ডজের বিরুদ্ধে জরিমানা বর্তমানের চেয়ে বেশি ধার্য করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে নতুন রায়ে। প্রথম রায়ে কোম্পানিটিকে বর্তমান রায়ের চেয়ে ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি জরিমানা করা হয়েছিল। তখন রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছিল জেঅ্যান্ডজে। তাদের বিরুদ্ধে যে রায় ও দায়দায়িত্ব চাপানো হয়েছিল তা ‘তথ্য বা আইন কোনোটি দ্বারা সমর্থিত নয়’ বলে অভিযোগ করা হয়েছিল কোম্পানিটির পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে বাল্কম্যানের নতুন রায় পর্যালোচনা করে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর কথা জানিয়েছেন ওকলাহোমার অ্যাটর্নি জেনারেল মাইক হান্টারের এক মুখপাত্র। উল্লেখ্য, মাত্রাতিরিক্ত অপিওয়েড সেবনের কারণে ১৯৯৯-২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় চার লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র।
এদিকে আগস্টে একটি নন-জুরি ট্রায়ালের পর বাল্কম্যানের দেয়া রায়ে নিজেদের হাতে জেঅ্যান্ডজের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর বিপণনের প্রমাণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। বিভ্রান্তিকর বিপণনের মাধ্যমে কোম্পানিটির লাভবান হওয়া এবং ওষুধটির আসক্তিজনিত ঝুঁকির কারণে অপিওয়েড সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে উপদ্রব তৈরির অভিযোগ এনেছিলেন ওকলাহোমার ওই বিচারক।
তবে জেঅ্যান্ডজের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার জরিমানা করার সুপারিশ করেছিলেন ওকলাহোমার অ্যাটর্নি জেনারেল। জরিমানার এ অর্থ আগামী ৩০ বছরে অপিওয়েড মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ও অন্য সেবামূলক কাজে ব্যয় করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন এ অ্যাটর্নি জেনারেল।
এদিকে বাল্কম্যান জেঅ্যান্ডজেকে যে জরিমানা করেছেন, তা অপিওয়েড মহামারীতে আক্রান্তদের শুধু এক বছরের চিকিৎসা ও অন্য সেবার বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে। কোম্পানিটিকে শুধু এক বছরের জন্য জরিমানা করার ব্যাখ্যায় নতুন রায়ে বলা হয়েছে, অপিওয়েড মহামারী প্রশমনে কত বছর দরকার হতে পারে, তার পক্ষে প্রয়োজনীয় যুক্তিতর্ক পেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে ওকলাহোমা।
অন্যদিকে গত মাসে জেঅ্যান্ডজেসহ অভিযুক্ত অন্য চার কোম্পানি অপিওয়েড সংকট সৃষ্টির দায়ে নিজেদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত যাবতীয় মামলা নিষ্পত্তির জন্য ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার প্রস্তাব করে, যার ৪০০ কোটি ডলার জেঅ্যান্ডজে প্রদান করার কথা। তবে স্থানীয় সরকারগুলো কোম্পানিগুলোর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। স্মর্তব্য, অপিওয়েড ছাড়া তাদের বেবি পাউডারে ক্যান্সারের উপাদান থাকার অভিযোগে মামলা চলছে জেঅ্যান্ডজের বিরুদ্ধে। তবে কোম্পানিটি এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
