দেশকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত করতে দৃঢ় ইচ্ছার কথা
পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি পরিবারকে দারিদ্র্যের
হাত থেকে মুক্ত করতে চাই। এ বাংলাদেশকে আর কেউ কখনো পেছনে টানতে পারবে না। আমরা
ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়তে সক্ষম হয়েছি, এখন সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করার কাজটাও করতে
হবে।
গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন
কেন্দ্রে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত উন্নয়ন
মেলা ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
দারিদ্র্যকে মূল শত্রু উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মূল
শত্রুটা কে? আমি বলি, আমাদের মূল শত্রু
হচ্ছে দারিদ্র্য। কাজেই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়তে হবে। দারিদ্র্যের হাত
থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন
করি। তারই ধারাবাহিকতায় কাজ করছি। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন
করাটাই আমাদের লক্ষ্য। সবসময় একটাই প্রচেষ্টা নিয়েছি যে দারিদ্র্য বিমোচন করতে হলে
কী কী করা যায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনা নিই এবং কাজ করে
যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ সালে আমাদের দেশে
দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ ভাগ। আজকে তা ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আমাদের লক্ষ্য, এটাকে অন্তত ১৫-১৬
ভাগের মধ্যে আমরা নিয়ে আসতে চাই। যাতে বাংলাদেশে আর দারিদ্র্য না থাকে, বাংলাদেশ যেন
নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলতে পারে, সেভাবে একটা হিসাব আমরা করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা তা
করতে পারব।
সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়তে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী
কাজ করে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বর্তমান না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে সম্মানের সঙ্গে
জীবনযাপন করতে পারে, সেই পরিকল্পনাও
আমরা তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে, এটা ধরে রেখে আমরা
এগিয়ে যাব, ২০৪১ সালের মধ্যে
বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। ২০৭১ সালে আমি তো তখন
বেঁচে থাকব না, তখন মানুষ এমন
একটা দেশ পাবে, ঠিকই সোনার বাংলার
নাগরিক হবে। ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্ল্যান করেছি। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে
যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এ বাংলাদেশকে
ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত
হিসেবে গড়বেন বলে তার স্বপ্ন ছিল। শুধু ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত করা না, বাংলাদেশের মানুষ
বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে,
সম্মানের সঙ্গে
চলবে। আওয়ামী লীগ সবসময় দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে। কারণ এ সংগঠন জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া।
বাংলাদেশ বিশ্বে ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে পৃথিবীর সব
জায়গায় একটা কথাই বলে যে বাংলাদেশ উন্নয়নের বিস্ময়, আমাকেও অনেকে জিজ্ঞাসা করে এই
যে এত দ্রুত উন্নয়ন করলেন ম্যাজিকটা কী? আমার এখানে উত্তর খুব পরিষ্কার, ম্যাজিক বলে কিছু
না। দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে
ভালোবাসা। আর নিজের দেশকে জানা, নিজেদের দেশের জন্য কাজ করা। আমরা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে
দেশের জন্য কাজ করছি।
প্রতিটি মানুষের আবাসন নিশ্চিতে সরকারের কার্যক্রমের
কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষকে
আমরা থাকার জায়গা করে দেব। আমাদের হিসাব আছে, কোন এলাকায় কত মানুষ গৃহহারা, তাদের আমরা ঘরবাড়ি
তৈরি করে দিচ্ছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। বস্তিবাসীর জন্য সরকারের ঘরে ফেরা
কর্মসূচির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা ঢাকা শহরে যত বস্তি আছে, এ বস্তিগুলো আমি
সার্ভে করিয়েছিলাম এবং তারা যদি নিজের গ্রামে ফিরে যেতে চায় তাদের আমরা ঘর তৈরি
করে দেব, ছয় মাস ভিজিএফের
মাধ্যমে বিনা পয়সায় খাদ্য দেব। তারা নিজের গ্রামে গিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা
করতে পারবে। বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে না। আমি এ কর্মসূচির নাম দিয়েছি ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি। সেভাবে
তাদের পুনর্বাসনের একটা উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম। দারিদ্র্যের হাত থেকে মানুষকে তুলে
নিয়ে আসা সেই চেষ্টাটা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা
ভাতা, নারীদের জন্য
বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা, দরিদ্র মানুষের
মাঝে বিনা মূল্যে খাদ্য বিতরণ করা, কৃষকদের সার ও কৃষি উপকরণগুলো সহজলভ্য করা, ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ, গৃহায়ন তহবিল থেকে
দরিদ্রের সহায়তা, কর্মসংস্থানের
মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করাসহ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন।