নিরীক্ষা দাবির অর্থ

শর্তসাপেক্ষে ২০০ কোটি টাকা দিতে চায় গ্রামীণফোন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরীক্ষা দাবির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে শর্তসাপেক্ষে ২০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে চায় সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চকে একথা জানান প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী শেখ ফজলে নূর তাপস। এ বিষয়ে আগামী সোমবার আদেশের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে বিটিআরসির পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন মাহবুবে আলম ও খন্দকার রেজা--রাকিব। আর গ্রামীণফোনের পক্ষে শেখ ফজলে নূর তাপস ছাড়াও ছিলেন আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন, আইনজীবী মেহেদী হাসান চৌধুরী, শরীফ ভূঁইয়া ও আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন।

গ্রামীণফোনের দাবির বিরোধিতা করে বিটিআরসির আইনজীবী মাহবুবে আলম কোম্পানিটির কাছে পাওনা আদায়ে বিটিআরসির নোটিস স্থগিত করে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের আবেদন করেন। তবে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন।

শুনানিতে অংশ নিয়ে ফজলে নূর তাপস বলেন, গত ৩ অক্টোবর দুই অপারেটরের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর সমঝোতা বৈঠকে বিটিআরসির আরোপিত প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে নেয়াসহ বিভিন্ন শর্তে ২০০ কোটি টাকা পরিশোধের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, গ্রামীণফোন সেভাবেই এগোতে চায়।

বৈঠকে দেয়া প্রস্তাবগুলো হলো দুই পক্ষ একটি কমিটি গঠন করে পাওনা পরীক্ষা অথবা পরীক্ষার পদ্ধতি বের করবে। বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানোর নোটিস ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে; অন্যদিকে অপারেটররা মামলা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেবে। অর্থমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, এনবিআর ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখবেন। কমিটি গঠন ও কমিটির কাজ শুরুর আগে সাতদিনের মধ্যে গ্রামীণফোন ১০০ কোটি ও পরের এক মাসের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা বিটিআরসিকে দেবে; রবি দেবে দুই দফায় ৫০ কোটি টাকা। এসব প্রস্তাব দুই অপারেটর তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে।

তবে মাহবুবে আলম এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আদালতকে বলেন, অন্তত পাওনার ৫০ ভাগ অর্থ গ্রামীণফোনকে জমা দিতে হবে। এরপর বাকি অর্থ পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

বিটিআরসির দাবি অনুযায়ী, নিরীক্ষা আপত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ  ও রবি আজিয়াটার কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে সরকারের। গত এপ্রিলে পাওনা অর্থ দাবি করে বকেয়া দাবি করে গ্রামীণফোন ও রবিকে নোটিস পাঠায় বিটিআরসি। পরবর্তী সময়ে অপারেটর দুটির এনওসি প্রদান বন্ধ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

পাওনা অর্থ আদায়ে দুই সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের লাইসেন্স কেন বাতিল হবে না তা জানতে চেয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর অপারেটর দুটিকে চিঠি দেয় বিটিআরসি। এর আগেই ঢাকার দেওয়ানি আদালতে আলাদাভাবে দুটি মামলা করে গ্রামীণফোন ও রবি। গত ২৫ আগস্ট মামলা করে রবি। আর গ্রামীণফোন মামলা করে ২৬ আগস্ট।

এমন পরিস্থিতিতে বিরোধ মীমাংসায় টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, বিটিআরসি ও অপারেটর দুটির কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এতেও সংকটের সুরাহা না হওয়ায় প্রশাসক নিয়োগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে বিটিআরসি। এরই মধ্যে প্রশাসক নিয়োগে অনুমোদনও দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

এরপর গ্রামীণফোনের টাইটেল স্যুট (স্বত্বের মামলা) মামলা নিম্ন আদালত গ্রহণ করলেও এর অধীনে বিটিআরসির দাবি আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন গত ২৮ আগস্ট খারিজ করে দেন। ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে গ্রামীণফোনের আপিলটি গ্রহণ করে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করলেও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান তাতে সাড়া না দিয়ে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এরপর ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিটিআরসি।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিটিআরসির লিভ টু আপিলের শুনানি নিয়ে গত ২৪ অক্টোবর গ্রামীণফোন ন্যূনতম কত টাকা দিতে পারবে তা জানতে চেয়ে ৩১ অক্টোবর আদেশের জন্য রেখেছিলেন আপিল বিভাগ। কিন্তু সে হিসাব দিতে না পারায় গ্রামীণফোন সময় চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন