দক্ষিণ এশিয়ায় ঘুষ দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ঝুঁকি আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছেও।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘুষবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রেস ইন্টারন্যাশনালের
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ‘ট্রেস ব্রাইবারি
রিস্ক ম্যাট্রিক্স’ শীর্ষক ওই
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সূচকে
বাংলাদেশে ঘুষের ঝুঁকি স্কোর দাঁড়িয়েছে ৭২, যা আগের বছরের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেশি।
প্রত্যেক দেশকে বিভিন্ন দিক বিচারে ১ থেকে ১০০-এর
মধ্যে স্কোর দেয়া হয়েছে। যে দেশের স্কোর যত বেশি, সে দেশে ব্যবসায় তত বেশি ঘুষের
ঝুঁকি রয়েছে। এ স্কোরের ভিত্তিতে তৈরি তালিকায় স্থান পেয়েছে বিশ্বের ২০০টি দেশ।
সবচেয়ে কম ঘুষের ঝুঁকি রয়েছে এমন দেশগুলো হলো নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন ও
ফিনল্যান্ড।
সম্প্রতি প্রকাশিত এ সূচকের ২০১৯ সালের সংস্করণে
ঘুষের ঝুঁকির ক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে ২ পয়েন্ট বেড়ে ৭২ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ
তালিকার ১৭৮তম অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের এ স্কোর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে
সবচেয়ে বেশি। ভারত ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে ৭৮তম ও পাকিস্তান ৬২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ১৫৩তম
অবস্থানে আছে।
বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য ক্ষেত্রে ঘুষের ঝুঁকির বিষয়ে
ব্যবসায়ীদের আরো বেশি নির্ভরযোগ্য তথ্যের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে প্রথম এ
সূচক প্রকাশ করা হয়। কোনো বিশেষ দেশে কোম্পানির কাছে ঘুষ চাওয়া হবে কিনা বা ঘুষের
সম্মুখীন হতে হবে কিনা তা এ সূচকের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।
বিনা মূল্যে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ সূচক
বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ঘুষের প্রসার ঘটায় এমন কতগুলো পরিস্থিতি বুঝতে কোম্পানিগুলোকে
সহায়তা করে। এগুলো হলো বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের ধরন ও বিস্তৃতি, ঘুষের প্রতি
সামাজিক মনোভাব ও তা নিষিদ্ধে সরকারের ক্ষমতা, সরকারের স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি পর্যবেক্ষণ ও প্রকাশে
সুশীল সমাজের সক্ষমতা।
প্রত্যেক দেশের ঘুষ ঝুঁকি পরিমাপ করা হয়েছে চারটি
ক্ষেত্র বিবেচনায়। এগুলো হলো সুযোগ, প্রতিবন্ধকতা, স্বচ্ছতা ও তদারকি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে আবার
বেশকিছু বিষয়। সুযোগ পরিমাপের জন্য রয়েছে তিনটি বিষয়—মিথস্ক্রিয়া, প্রত্যাশা ও
সুবিধায়ন। ঘুষবিরোধী কার্যক্রম ও সামাজিক সচেতনতা পরিমাপ করা হয় প্রতিবন্ধকতা
ক্ষেত্রটির আওতায়। স্বচ্ছতা পরিমাপ করা হয় প্রক্রিয়া ও স্বার্থের মাধ্যমে। আর
তদারকির বিষয়টি মুক্ত গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের সক্রিয়তার ওপর নির্ভর করে।
সামগ্রিক সুযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ৮৬। এর
আওতায় থাকা বিষয়গুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় স্কোর ৬৮, প্রত্যাশায় ৭৮ ও সুবিধায়নে
স্কোর ৭৭। সামগ্রিক প্রতিবন্ধকতায় স্কোর ৬৩। এর মধ্যে সামজিকভাবে ঘুষবিরোধী
মনোভাবে স্কোর ৬৮ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্কোর ৬৪। সামগ্রিক স্বচ্ছতা স্কোর ৬০। এর
মধ্যে প্রক্রিয়ায় স্কোর ৬১ ও স্বার্থে স্কোর ৬২। সামগ্রিক তদারকির ক্ষেত্রে
বাংলাদেশের স্কোর ৬৪। মুক্ত গণমাধ্যমে এটি ৫৬ ও সুশীল সমাজের সক্রিয়তার ক্ষেত্রে এ
স্কোর ৬৯।
এছাড়া তালিকায় ৬৬ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তানের অবস্থান
১৬৮।
শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৪, নরওয়ের ৭, ডেনমার্কের ৭, সুইডেনের ৮, ফিনল্যান্ডের ৯, যুক্তরাজ্যের ১১, নেদারল্যান্ডসের
১২, কানাডার ১৪, জার্মানির ১৫ ও
হংকংয়ের ১৬। আর তালিকার তলানিতে থাকা ১০টি দেশের স্কোর হলো লিবিয়া, তুর্কমেনিস্তান, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি
ও কঙ্গোর স্কোর ৮২। বুরুন্ডি, কম্বোডিয়া ও ইরিত্রিয়ার স্কোর ৭৯। মধ্য আফ্রিকান
প্রজাতন্ত্রের স্কোর ৭৮। আর গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর স্কোর ৭৭। এছাড়া অ্যাঙ্গোলার
স্কোর ৭৬। ১১ স্কোর নিয়ে যুক্তরাজ্য তালিকার ৬ ও ১৮ স্কোর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র
তালিকার ১৫তম অবস্থানে রয়েছে।