আব্দুল হাই একজন হকার। সোজাভাবে বললে
বলা যায় ঘুরে ঘুরে নানা রকম জিনিস বিক্রি করাই যার পেশা। শিশুদের ঘুড়ি, খেলনা, টুকটাক
প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রির উদ্দেশ্যে শহরের এ গলি সে গলি ঘুরে বেড়ান তিনি। একটা সময়
শহরে ধুলোবালি বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের খেলনা কিংবা অন্য কিছু ফেলে সার্জিক্যাল মাস্ক
বিক্রি শুরু করেন। মজার বিষয় মাস্ক তৈরিতে শুধু তিনিই নন, তার
সঙ্গে কাজ করে তার পরিবার। বাড়ির সবার সাহায্য নিয়ে সুন্দর পাখির মুখসদৃশ মাস্ক
তৈরি করে বিক্রির উদ্দেশ্যে ছোটেন।
ছোট্ট মাস্কে এমন ভিন্নতা, ফলে
দ্রুতই বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে আব্দুল হাইয়ের তৈরি মাস্কের সুনাম। এমনকি বিশ্বনেতাদের এক
পরিবেশ-বিষয়ক সম্মেলনে আব্দুল হাইকে দায়িত্বও দেয়া হয় মাস্ক তৈরির। দায়িত্ব
পালন করতেই তিনি সব নেতার জন্য চমত্কারভাবে ভিন্ন ভিন্ন পশুদের মাস্ক বানান। বিশেষ
করে সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য বানান শূকরের আদলে মাস্ক। মাস্কগুলো
পরে রাষ্ট্রপ্রধানরা বক্তৃতা দেন বিশ্ব সম্মেলনে। সব ঠিকঠাকভাবেই হয়েছে। সম্মেলনের
শেষ ঘণ্টাও পড়েছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটল তখনই;
কেননা সম্মেলন শেষে রাষ্ট্রপ্রধানরা যে মাস্ক
পরেছিলেন, তা আর খুলতে পারেন না। মোটামুটি সব চেষ্টাই চালানো হয় সে মাস্ক খোলার
জন্য। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ। ফলে খোঁজ পড়ে আব্দুল হাইয়ের। চারপাশে সবাই খুঁজছে
কিন্তু লাপাত্তা মাস্ক তৈরিকারী। নিখোঁজ আব্দুল হাই। মুখোশ খুলতে না পারা নেতাদের
নিয়েই গল্প এগোয় ‘শেষ মুখোশ’ নাটকের।
চমত্কার গল্পের এ নাটকটিই প্রাচ্যনাট
থিয়েটার গ্রুপ আজ মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে এশিয়ান ইয়ুথ থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে। এবারের
থিয়েটার ফেস্টিভ্যালটি অনুষ্ঠিত হবে মালয়েশিয়ার সাবাহ রাজ্যের কোটা কিনাবালু শহরে।
দুই বছর ধরে সিঙ্গাপুরে বার্ডস থিয়েটারের উদ্যোগে এশিয়ার বিভিন্ন নাটকের দলগুলো
নিয়ে এ ধরনের আয়োজন হয়ে আসছে। সিঙ্গাপুর,
মালয়েশিয়া,
নেপাল,
থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার
ও বাংলাদেশসহ ১২টি দেশের থিয়েটার গ্রুপ এ ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করছে এবারের
আয়োজনে। চমত্কার বিষয় হচ্ছে,
শুরু থেকে এ উৎসবে অংশগ্রহণ করছে প্রাচ্যনাট
থিয়েটার গ্রুপ।
চারপাশে যখন চলছে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন, তখন চুপ করে থাকবে কেন থিয়েটারের মতো শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম। আর তাই তো শিল্পের মাধ্যমেই পরিবেশ আন্দোলনে শামিল হতেই এমন আয়োজন। কেননা এবারের ফেস্টিভ্যালের থিম নির্ধারিত হয়েছে ‘পরিবেশ’। থিম অনুযায়ী বিশ্ব পরিবেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিপর্যয়ের বিষয় বিবেচনা করে এ বিষয়ের ওপর প্রত্যেকটি থিয়েটার গ্রুপ তাদের নাটক পরিবেশন করবে।