হাওড়ের সৌন্দর্যে ডুব!

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম

তারিখটি ছিল ৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত। আদি ঢাকার বংশাল থেকে মাইক্রোবাস স্টার্ট। পথের মাঝে নানা জায়গায় টি ব্রেক দিতে দিতে ভোর ৫টায় পৌঁছাই কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালী। ফোন পেয়ে আগেই বাজারে এসে অপেক্ষায় ছিল দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের অন্যতম সদস্য তরিকুল। তাকে সঙ্গে করে চলে যাই ইন্দা গ্রামের নৌঘাটে। বাজার-সদাই চুলা পাতিল নিয়ে চড়ি ট্রলারে। সব ঠিকঠাক, মাঝি ট্রলার ভাসাল নরসুন্দা নদীর খালে। ট্রলার চলতে চলতে খাল পেরিয়ে ঘোড়া উতরা নদী ছাড়িয়ে নিকলির ছাতিরচর পানে। এরই মধ্যে সকালের নাশতার জন্য খিচুড়ি রান্নার কসরত শুরু।

যেতে যেতে একসময় দূর থেকেই চোখে ধরা দেয় ডুবোচরে জেগে থাকা সারি সারি হিজল-কড়চ গাছ। এ এক অনিন্দ ভালো লাগার হাতছানি। সামনে যেতেই চোখ সবার কপালে। বাঁকাত্যাড়া শত শত গাছ। বছরের ছয় মাস প্রায় ডুবে থেকেও বেঁচে থাকার নামই হিজল-কড়চ গাছ। চরটা অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা। আকাশপানে তাকিয়ে দেখি নীলের বদলে ফিরোজা। দূরের শুভ্র মেঘমালা দেখে মনে হয় এ যেন কোনো পর্বতচূড়া! সব মিলিয়ে ভোরের হাওয়ায় নিকলি হাওড়ের আকাশটা অন্য রকম ভালো লাগার। এ রকম মায়াবী নয়নাভিরাম পরিবেশে গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে হাঁটুপানিতে হেঁটে বেড়াই। হাওড়ের ঝিরঝির বাতাসে হ্যামোক ঝুলিয়ে দোল খাই। কথায় আছে না, সকালের হাওয়া-লাখ টাকার দাওয়া। কে চায়? বিনা পয়সায় সেই সুযোগ ছাড়তে। জীবনের মানে খুঁজে পেতে চাইলে ছাতিরচরের জুড়ি নেই।

এরই মধ্যে কলাপাতায় খিচুড়ি রেডি। ইচ্ছেমতো গোগ্রাস করে ছুটলাম এবার অষ্টগ্রাম হাওড়ের পথে নিকলি বেড়িবাঁধ পাশ কেটে ট্রলার চলে মোজনা বিলে। ভাসতে ভাসতে বিশাল হাওড়ের বুকে। কূল নেই কিনার নেই, নেই কোনো জনমানবের বসতি। সাগর আর হাওড় এ দুয়ের পার্থক্য যেন বোঝা বড় দায়। কিশোরগঞ্জে রয়েছে প্রায় ৯৭টি ছোটবড় হাওড়। এসব হাওড় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন বিল-হাওড়ের সঙ্গে মিশে একাকার। দেশের মিঠাপানির মাছের চাহিদা অনেকাংশই মেটে এসব হাওড়ের জলাশয় থেকে। হাওড়ের মুগ্ধতায় ভর করে ট্রলার চলছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা লাগবে অষ্টগ্রাম পৌঁছতে। এ দীর্ঘ সময়ে দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের দামালরা নেচে-গেয়ে উল্লাস করে। দুপুরের রান্নার জন্য রফিক-নাজমুল হাঁসের চামড়া ছিলে। মাঝেমধ্যে জেলে নৌকার দেখা মেলে। তাদের কাছ থেকে কেনা হাওড়ের টাটকা চিংড়ি ভাজায় রসনা মেটে। পানকৌড়ির ঝাঁক ভ্রমণানন্দ বাড়িয়ে দেয়। ভাসতে ভাসতে ট্রলার পড়ল ধলেশ্বরীর বুকে। প্রমত্তা ধলেশ্বরী নদী। অথচ নারায়ণগঞ্জে এসে চরম মার খেয়েছে।

ঘড়ির কাঁটায় প্রায় দুপুর ১২টা। চোখে আটকায় অষ্টগ্রামের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সেতুর উপরে। নজরকাড়া সৌন্দর্যমণ্ডিত সেতুটি। দেখেই চোখ জুড়াল। ট্রলার এসে থামে থানা ঘাটে। নেমে যাই পানিতে। দে-ছুটের দামালরা ডুব সাঁতারে মেতে ওঠে। জুমার নামাজের তাড়া। যেতে হবে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে হজরত কুতুব শাহ জামে মসজিদে। আর দেরি নয়।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন