চীনের কারখানা উৎপাদন ধারণার চেয়ে বেশি মন্থর

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছরের অক্টোবরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের কারখানা উৎপাদন প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। মূলত বৈশ্বিক ও স্থানীয় চাহিদার দুর্বলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানা বাণিজ্যযুদ্ধ দেশটির অর্থনীতির বৃহত্তম অংশগুলোকে প্রভাবিত করেছে। যে কারণে গত মাসে চীনের কারখানা কার্যক্রমে ধারণার চেয়ে বেশি মন্থরতা দেখা গেছে। খবর রয়টার্স।

গতকাল প্রকাশিত ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের (এনবিএস) পরিসংখ্যান অনুসারে, অক্টোবরে চীনের শিল্প উৎপাদন বছরওয়ারি ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; যা রয়টার্সের মতামত জরিপের গড় পূর্বাভাস ৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম এবং সেপ্টেম্বরের ৫ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে মন্থর।

সিডনির এএমপি ক্যাপিটালের প্রধান অর্থনীতিবিদ শেন অলিভার বলেন, বিনিয়োগ ও উৎপাদনের দুর্বলতা আস্থার পতন নির্দেশ করছে। বাণিজ্য যুদ্ধই এর অন্যতম বড় কারণ। তিনি আরো বলেন, এ পরিস্থিতি চীনা কর্তৃপক্ষের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করার চাপ আরো বাড়াবে।

সূচকগুলোয় অন্যান্য খাতেও উল্লেখযোগ্য মন্থরগতির পাশাপাশি পূর্বাভাস অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে খুচরা বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে সংকোচনের কাছে পৌঁছেছে এবং স্থায়ী সম্পদ বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি রেকর্ড দুর্বল হয়েছে।

এসব হতাশাজনক পরিসংখ্যান চলতি বছরের চূড়ান্ত প্রান্তিকটি চীনের অমসৃণভাবে শুরু করার আভাস দিচ্ছে। এছাড়া তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধি প্রায় তিন দশকের সর্বনিম্নে পৌঁছার পর এ দুর্বল পরিসংখ্যান নতুন প্রণোদনা পদক্ষেপ গ্রহণে বেইজিংয়ের ওপর চাপ আরো বাড়াবে।

এদিকে অক্টোবরে চীনের দুর্বল পরিসংখ্যানের কারণে গতকাল এশিয়ার শেয়ারবাজার নিস্তেজ হয়ে পড়তে দেখা যায়। ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তিটির ওপর বাণিজ্যযুদ্ধের অব্যাহত নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল জাপান বাদে এশিয়াপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিস্তৃত এমএসসিআই সূচক সকালের লেনদেনে ধনাত্মক টেরিটোরিতে থাকলেও পরে দশমিক ৪ শতাংশ হারিয়ে ঋণাত্মক টেরিটোরিতে ফিরে যায়। এছাড়া জাপানের নিক্কেই সূচকে দশমিক ৬ শতাংশ পতন দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচকেও পতন দেখা গেছে।

এক নোটে জাপানের আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নমুরা হোল্ডিংস জানায়, চীনের প্রবৃদ্ধিতে অস্থিতিশীলতা বহাল রয়েছে, এ দুর্বল পরিসংখ্যান আমাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গিকেই সমর্থন করছে। এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকের ৬ দশমিক শূন্য শতাংশ থেকে চতুর্থ প্রান্তিকে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরো মন্থর হয়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস করেছে নমুরা।

অক্টোবরে উৎপাদক পর্যায়ের মূল্য তিন বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে দ্রুতগতিতে পতনশীল থাকায় চীনের কারখানা খাতের বিস্তৃত কার্যক্রমে দুর্বলতা বহাল ছিল। গত মাসে চীনের ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রম টানা ছয় মাসের মতো সংকুচিত হতে দেখা যায়।

গতকালের পরিসংখ্যান অনুসারে, অক্টোবরে সরবরাহকৃত শিল্প পণ্যের রফতানি মূল্য বছরওয়ারি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন মাস খাতটিতে পতন দেখা গেল। এছাড়া গত মাসে চীনের ইস্পাত উৎপাদন হ্রাস পেয়ে সাত মাসের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। একই সময় সিমেন্ট উৎপাদন এক বছরের মধ্যে প্রথমবার সংকুচিত হয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান শুল্কযুদ্ধ বৈশ্বিক চাহিদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ও আর্থিক বাজারগুলো অস্থিতিশীল করেছে। চীনের বাইরে বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ বাণিজ্য শক্তিও এ বাণিজ্যযুদ্ধের ধাক্কা খেয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকে জাপানের অর্থনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটি দুর্বলতম প্রবৃদ্ধির কথা জানিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন