ফ্রয়েডের চোখে ভিঞ্চির মন এবং মোনালিসার হাসি

শানজিদ অর্ণব

সিগমুন্ড ফ্রয়েড তার বহু রচনার মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত জীবনীও রচনা করেছিলেন। একজন প্রত্নতাত্ত্বিক যেমন খনন বা অন্য কোনো উপায়ে প্রাপ্ত পুরনো বস্তু থেকে অতীতকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন, সে রকম এক কাজ ছিল ফ্রয়েড কর্তৃক ইতালীয় পলিম্যাথ ইউরোপীয় রেনেসাঁর অন্যতম পুরোধা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জীবনী রচনা। ফ্রয়েড রচিত বইটির শিরোনাম লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি : মেমোরি অব হিজ চাইল্ডহুড।

১৯২১ সালে প্রকাশিত বইটির একটি সংস্করণের ভূমিকায় আর্নেস্ট জোনস লিখেছিলেন, ‘ রচনা প্রক্রিয়াটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক পুনর্নির্মাণের মতো। লিওনার্দো তার শৈশব সম্পর্কে যে দু-এক কথা উল্লেখ করে গেছেন, সেগুলোকে ভিত্তি করেই ফ্রয়েড তার অনুসন্ধান চালিয়েছেন; বেশির ভাগ মনস্তত্ত্ববিদই এসব উপাদানকে নগণ্য অর্থহীন হিসেবে উড়িয়ে দেন।...অধ্যাপক ফ্রয়েড এসব নিয়ে কাজ করেছেন, তুলনা করেছেন তারই বিশ্লেষণ করা সমধর্মী অন্য সব ঘটনা এবং একই সঙ্গে লিওনার্দোর জীবনের অন্যান্য জানা ঘটনার সঙ্গে। এই চিত্তাকর্ষী অনুসন্ধানের মাধ্যমে অধ্যাপক ফ্রয়েড ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় কৌতূহলোদ্দীপক এক ব্যক্তিত্বের ওপর আলো ফেলেছেন।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি: মেমোরি অব হিজ চাইল্ডহুড বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১০ সালে। ভিঞ্চিকে নিয়ে ফ্রয়েডের আগ্রহ ছিল অনেক দিন ধরেই। ১৮৯৮ সালের অক্টোবর তিনি ফ্লিয়েসকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘সম্ভবত দুনিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত বাঁ হাতি ব্যক্তি হলেন লিওনার্দো, তার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল এমনটা জানা যায় না।লিওনার্দোর জীবনী লেখার কাজ ফ্রয়েড শুরু করেছিলেন ১৯০৯ সালের শরত্কালে, সময় তার এক রোগীর বৈশিষ্ট্য ফ্রয়েডকে বইটি লেখার কাজ শুরু করতে তাত্ক্ষণিক তাগাদা দিয়েছিল। ফ্রয়েডের এক চিঠিতে দেখা যায়, তিনি সেই রোগীকে দেখছেন ভিঞ্চির মেধা ছাড়া একই রকম চরিত্রের। ফ্রয়েড আরো লিখেছেন, তিনি ইতালি থেকে ভিঞ্চির তরুণ জীবন সম্পর্কে একটি বই সংগ্রহ করেছেন। এটা ছিল স্কগনামিগলিওর লেখা একটি মোনোগ্রাফ। মনোগ্রাফ ভিঞ্চির ওপর আরো কয়েকটি বই পড়ার পর ডিসেম্বর ফ্রয়েড ভিয়েনা সাইকো-অ্যানালিটিক্যাল সোসাইটিতে একটি ভাষণ দেন। ১৯১০ সালের এপ্রিলের শুরুতে তিনি ভিঞ্চি বিষয়ে তার রচনা সমাপ্ত করেন। মে মাসের শেষ নাগাদ লেখাটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে ফ্রয়েড রচনায় অনেক সংশোধন এনেছিলেন। এর আগে ফ্রয়েড এমন পূর্ণাঙ্গ ধরনের কোনো জীবনী রচনা করেননি, পরেও আর করেননি।

ফ্রয়েড এমন এক মানুষের জীবন-মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করেছেন, যিনি দুনিয়ার ইতিহাসের এক বিরল প্রতিভা। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি একাধারে চিত্রকর, ভাস্কর, স্থপতি, বিজ্ঞানী, সংগীতজ্ঞ, গণিতবিদ, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, শরীরতত্ত্ববিদ, ভূতত্ত্ববিদ, জ্যোতির্বিদ, উদ্ভদবিদ। এখানেই অবশ্য শেষ নয়, তার আরো পরিচয় আছে। ফ্রয়েড তার বইয়ে ভিঞ্চির শিল্পী বিজ্ঞানীসত্তার দ্বন্দ্বকে আবিষ্কার করেছেন, নির্মাণ করেছেন তার অনুভূতির জগৎ, দেখিয়েছেন ভিঞ্চির মধ্যে ছিল বিশেষ ধরনের সমকামী ভাব। সিগমুন্ড ফ্রয়েড তার জীবনীগ্রন্থের মাধ্যমে দুনিয়াকে দিয়েছেন সাইকো-অ্যানালিটিকাল থিওরির ইতিহাসে এক বিশেষ কাজ। কাজের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো নার্সিজমের ধারণা দুনিয়ায় উন্মোচিত হয়েছে।

লিওনার্দো ছিলেন কৌতূহলী এবং পারফেকশনিস্ট মানুষ। দুনিয়ার সব কিছুই তিনি বুঝতে চাইতেন আর তার পারফেকশনিস্ট হওয়ার প্রবণতার কারণে তিনি অনেক কাজই সম্পূর্ণ করতে পারেননি, এমনকি মোনালিসাকেও নয়। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘কোনো কিছুকে ভালোবাসতে বা ঘৃণা করতে অবশ্যই আগে তাকে ভালোভাবে জানতে হবে।ফ্রয়েড বলছেন, লিওনার্দোর জীবনে ধারণা কার্যকরী

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন