চলতি বছরের ৩০ জুন টাকা গণনার একটি যন্ত্র ক্রয় করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। ৫৪ লাখ ৭ হাজার ৩০০ টাকায় ক্রয়কৃত যন্ত্রটির ভাউচার দুটি খাতে দেখিয়েছে ব্যাংকটি। একবার দেখানো হয়েছে কম্পিউটার ও অন্যান্য উপকরণ হিসেবে। একই যন্ত্র দেখানো হয়েছে আসবাব হিসেবেও। একই যন্ত্র দুই খাতে ক্রয় দেখানোর মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
টাকা গণনার যন্ত্র ক্রয়েই শুধু নয়, সরকারের বিশেষায়িত ব্যাংকটির অন্যান্য খাতেও অনিয়ম ও অসামঞ্জস্যের প্রমাণ পেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকৃত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিরীক্ষায় বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ধার করা ১৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ, আর্থিক বিবরণীতে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ ৪২ কোটি টাকা কম দেখানোসহ মৌলিক বিভিন্ন খাতে অনিয়মের কথা উঠে এসেছে নিরীক্ষায়। পরিমাণ যা-ই হোক, এসব অনিয়ম ছোট-বড় যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় ধরনের অনিয়ম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থ মন্ত্রণালয় নিযুক্ত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন হলো, ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা দুর্বল।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা জানতে একাধিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাকাবে নিরীক্ষা চালায় সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং ও এমএম রহমান অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়, ঢাকা করপোরেট শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলো নিরীক্ষা করা হয়। সম্প্রতি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি রাকাবের ওপর পরিচালিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। এর একটি কপি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের একটি কপি বণিক বার্তার হাতেও এসেছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাকাবের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে শাখাগুলোর অসমন্বিত অর্থের পরিমাণ ৩১ কোটি টাকা। ১৭৩ কোটি টাকা অসমন্বিত রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে। আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে অসমন্বিত অবস্থায় রয়েছে ৪৬ লাখ টাকা। অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে দীর্ঘদিনেও এসব হিসাবের সমন্বয় করা যায়নি।
