দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত
বহুজাতিক সিমেন্ট উত্পাদনকারী কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড
আল্ট্রাটেক সিমেন্ট মিডল ইস্ট ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কাছ থেকে এমিরেটস সিমেন্ট
বাংলাদেশ লিমিটেড ও এমিরেটস পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের শতভাগ শেয়ার কেনার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে অধিগ্রহণ মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৪
ডলার বা ১৮২ কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৪ টাকা। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত
নিয়েছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের পর্ষদ। আর গতকাল স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে
কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০
সালে ভারতীয় আদিত্য বিরলা গ্রুপ কর্তৃক ইটিএ স্টার সিমেন্টকে অধিগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের
বাজারে আল্ট্রাটেক সিমেন্টের উত্পাদন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে আদিত্য বিরলা গ্রুপ
বাংলাদেশে এমিরেটস সিমেন্ট নামে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করে কার্যক্রম চালায়।
এমিরেটস সিমেন্টের মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে বার্ষিক দশমিক ৫ মেট্রিক টন সক্ষমতার
একটি গ্রাইন্ডিং প্লান্ট রয়েছে। অন্যদিকে কাঁচপুর ও চট্টগ্রামে হাইডেলবার্গ
সিমেন্টের দুটি গ্রাইন্ডিং প্লান্ট রয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমান বার্ষিক উত্পাদন
সক্ষমতা ১০ লাখ ৭৫ হাজার টন। কাঁচপুরের প্লান্টে নির্মাণাধীন নতুন গ্রাইন্ডিং
মিলের কাজ শেষ হলে এর সঙ্গে আরো ৪ লাখ ৭২ হাজার টন পিসিসি সিমেন্ট উত্পাদনের
সক্ষমতা যোগ হবে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের
সিমেন্টের বাজারে একসময় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রাধান্য ছিল। নব্বইয়ের দশকের
মাঝামাঝি সময়েও দেশের চাহিদা ৯৫ শতাংশ সিমেন্ট আমদানির মাধ্যমে মেটানো হতো। কিন্তু
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এরপর থেকেই স্থানীয় উদ্যোক্তারা সিমেন্ট খাতে বিনিয়োগ করতে
থাকেন। একপর্যায়ে এসে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সিমেন্টের বাজারের দখল নিয়ে
নেয় স্থানীয় উত্পাদকরা। এমনকি বর্তমানে দেশের সিমেন্ট কারখানাগুলোর সক্ষমতার
অর্ধেকই অব্যবহূত থাকছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমিরেটস সিমেন্ট বাংলাদেশে
ব্যবসায়িকভাবে চাপে পড়ে যায়। এতে তারা বাংলাদেশের বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ
খুঁজতে থাকে। অন্যদিকে স্থানীয় উত্পাদকদের আগ্রাসী ব্যবসায়িক কৌশলের সঙ্গে তাল
মেলাতে হিমশিম খাওয়া হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাজারে নিজেদের হিস্যা ধরে রাখতে ব্যবসা সম্প্রসারণের
নজর দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় তারা বাংলাদেশে এমিরেটস সিমেন্ট ও পাওয়ারকে কেনার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের পর্ষদ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৪ টাকা ৩৩ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৮২ টাকা ৬৮ পয়সায়। এর আগে ২০১৭ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১৪ টাকা ২১ পয়সা আর এনএভিপিএস ছিল ৮৩ টাকা ১৭ পয়সা। সে হিসাব বছরে কোম্পানিটি ১৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তাছাড়া ২০১৬ ও ২০১৫ হিসাব বছরে ৩০০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।