মডেল, উপস্থাপক, অভিনেত্রী, ব্যবসায়ী ও আইনজীবী ঠিক এতগুলো পরিচয় যার, তিনি জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। তবে মডেল হিসেবেই বেশি পরিচিত তিনি। ২০০৭ সালে মিস বাংলাদেশ খেতাব অর্জন করেন। ২০১২ সালে চোরাবালি ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। এরপর প্রবাসী প্রেম, গ্যাংস্টার রিটার্নস, দ্য স্টোরি অব সামারাসহ বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নাম-ডাক রয়েছে এ অভিনেত্রীর। কথা হয় তার কাজ ও আনুষঙ্গিক নানা বিষয় নিয়ে। তার সঙ্গে আলাপের কিছু অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো—
মা
সুদ রানা
ছবিতে ক্যাপ্টেন
রুপার চরিত্রে
আপনাকে দেখা
যাবে—এমন
গুঞ্জন উঠেছে।
এর সত্যতা
কতখানি?
বিষয়টি নিয়ে আমি এখন কিছু বলতে চাই না। ছবির কাজ শুরু হবে জানুয়ারিতে। কাজ শুরু হলে সবাই সবকিছু জানতে পারবে।
আন্তর্জাতিক
মহলে আপনার
পরিচিতি বেশ,
সেদিক থেকে
বলিউডে কোনো
কাজের প্রস্তাব
পেয়েছিলেন কি?
কয়েকটি ছবির প্রস্তাব পেয়েছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেগুলোয় কাজ করা হয়ে ওঠেনি। অনেক সময় সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরও কাজ করা সম্ভব হয় না। তবে ভবিষ্যতে যদি ভালো কাজের প্রস্তাব পাই, তাহলে করব। ভালো যেকোনো কাজেই আমার আগ্রহ। সেটা হতে পারে নাটক, চলচ্চিত্র, মডেলিং কিংবা উপস্থাপনা।
২০১৬
সালে ‘ভোগ’
ম্যাগাজিনের ভারতীয়
সংস্করণের প্রচ্ছদে
আপনাকে দেখা
গেছে। সে
সময়ের কিছু
স্মৃতি নিয়ে
জানতে চাই।
সেই সময় আমি ড. কামাল হোসেনের অধীনে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছিলাম। ভোগ ম্যাগাজিনে কাজের কথা অনেক দিন ধরেই হচ্ছিল। যেদিন আমাকে ডাকা হলো, আমি খুব চিন্তায় ছিলাম যে ছুটি পাব কিনা। কারণ আমি তখন সেখানে জব করছিলাম। সেই সময় ভোগে অংশগ্রহণের চেয়ে ছুটির বিষয়টি ছিল অনেক চিন্তার। এছাড়া যেদিন যাব, সেদিন বার কাউন্সিলে মাধ্যমিকের মার্কশিট জমা দেয়ারও দিন ছিল। আর আমার মার্কশিটও তোলা ছিল না। সেটা ছিল মাইলস্টোন কলেজে। সেদিনই ওখান থেকে মার্কশিট তুলে জমা দিয়ে তারপর রওনা হই। এ রকম অনেক ছোট ছোট স্মৃতি জড়িয়ে আছে কাজটির সঙ্গে। তবে সব বাধা কাটিয়ে ঠিকঠাকভাবে সব হয়ে গিয়েছিল। এজন্য আমি খুব খুশি ছিলাম। এখনো মনে পড়ে সেই সময়ের কথা। আর সত্যি বলতে, তখন আমি বুঝতে পারিনি এ কাজে মানুষ এত প্রশংসা করবে, আমাকে চিনবে, বুঝবে।
মডেলিংয়ের
সঙ্গে সম্পর্ক
দীর্ঘদিনের। যারা
মডেলিং করতে
আগ্রহী, তাদের
জন্য আপনার
পরামর্শ কী?
মডেলিং এখন এমন একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, যেখানে এটাকে পেশা হিসেবে নেয়া যায়। আমি দুই বছর আগেও একথা বলিনি। অন্যান্য পেশার মতো এখানেও অনেক পড়াশোনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেকেরই ধারণা, এ পেশায় আসতে গেলে পড়াশোনার খুব একটা দরকার হয় না। কিন্তু আমি বলব, এখানে প্রচুর পড়াশোনার প্রয়োজন আছে। তাছাড়া মডেলিং পেশার সঙ্গে বয়সের একটা সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়টা মাথায় রেখে সবার পড়াশোনা করা উচিত। এখানে দীর্ঘ সময় নিজেকে ধরে রাখা খুব কঠিন। আমি ১১-১২ বছর ধরে কাজ করছি। আমি আমার সময়ের কাউকেই এখন দেখতে পাই না। মডেলিংয়ে ৩৫ বা ৪০ বছর পর্যন্ত কাজ করা যায়। কিন্তু তারপর কী করা হবে, সেটা মাথায় রেখে এ পেশায় আসা উচিত।
মডেলিংয়ে
বাংলাদেশের বর্তমান
অবস্থা কেমন?
সত্যি বলতে, বাংলাদেশ নাটক ও ছবির তুলনায় মডেলিংয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা এখন একটি উন্নয়নশীল দেশে বাস করছি। এখানে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এগুলোর পর ফ্যাশনের বিষয়টা আসে। কিন্তু চলচ্চিত্র, নাটকের বিষয়টা একটু অন্য রকম। এগুলো সব শ্রেণী-পেশার মানুষ দেখে। আর মডেলিং হলো উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জন্য। এ কারণে মডেলিং নিয়ে সাধারণ মানুষের খুব বেশি জানাশোনা নেই। মডেলিং, উপস্থাপনা, অভিনয়—তিনটা ক্ষেত্রেই আমার বিচরণ আছে। আমি বলব বর্তমানে মডেলিং অনেক এগিয়ে গেছে। এগিয়ে যাওয়ার একটি কারণ হলো আমাদের পোশাক শিল্প। আমাদের পোশাক শিল্প অনেক সমৃদ্ধি লাভ করেছে। বর্তমানে অনেক নতুন ব্র্যান্ড আমরা দেখতে পাচ্ছি। যাদের গার্মেন্টস আছে, তারাও নিজেদের আউটলেট তৈরি করছে। ফলে আমাদের মডেলিংয়ের সুযোগ বেড়ে যাচ্ছে।
আপনি একাধিক পেশায় যুক্ত। যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেকোনো একটি কাজকে বেছে নিতে হবে। কোনটিকে বেছে নেবেন?
আমি এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে দিই না। আমি মডেলিং থেকে যখন ছবিতে আসি, তখন অনেকেই ভেবেছে আমি মডেলিং ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি তো ছাড়িনি। মডেলিং আমার শিকড়। এখান থেকেই আমি এসেছি। আর আমি তো মডেলিংয়ে খারাপ করিনি। ছবি করছি মানেই আমি মডেলিং ছেড়ে দেব, বিষয়টা এ রকম নয়। আবার ক্রিকেটে উপস্থাপনার পর যখন মাসুদ রানার কাজের কথা উঠল, তখনো অনেকেই ভেবেছিল আমি উপস্থাপনা ছেড়ে দিয়েছি। আমার কাছে একটা পেশার জন্য আরেকটা পেশা ছেড়ে দেয়া মানে সেই পেশাকে ছোট করে দেখা। যেটা আমি কখনই করি না। যারা করে, তারা বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। সময়ের অভাব তাহলেও বলব আমি কোনো একটা পেশাকে বাছাই করব না। যদি করতেই হতো, তাহলে আগেই করতাম। আমি কাজে বিশ্বাসী। কাজকে অনেক প্রাধান্য দিই। আর পরিশ্রম করতেও পছন্দ করি।
চোরাবালি
আপনার প্রথম
ছবি। ছবিতে
কাজের অভিজ্ঞতা
নিয়ে কিছু
বলুন...
চোরাবালি
ছবির কাজ যখন করি, তখনো বুঝতে পারিনি যে আমি ছবিতে কাজ করব। প্রথমে ছবিটিতে কাজ করতে চাইনি। যেহেতু এটা আমার প্রথম ছবি ছিল, কাজ করতে পারব কিনা সে বিষয়ে একটু নার্ভাস ছিলাম। এছাড়া তখন আমি আইন নিয়ে পড়ছিলাম। পড়াশোনারও চাপ ছিল। দুই দিক সামলাতে পারব কিনা এসব ভাবনা কাজ করেছিল। যা-ই হোক, আমি রনি ভাইয়ের কাছে অডিশন দিই। তারা আমাকে সিলেক্ট করে। তারপর আমি কাজটি শুরু করি। মন দিয়ে কাজটি করার চেষ্টা করি। ছবিটি সফল হবে কিনা সেটা মাথায় ছিল না।
সামাজিক
মাধ্যমে আপনাকে
নিয়ে সমালোচনা
কীভাবে দেখেন?
খারাপ-ভালো যা-ই বলুক, আমি এগুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করি। আমার কাছে মনে হয়, যাদের বিষয়ে মানুষের আগ্রহ, তাদের নিয়ে কথা বেশি হয়। এছাড়া আরেকটি বিষয় আমার মনে হয়, একজন নারী যখন আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠেন, তখন অনেকেই সেটা মেনে নিতে পারেন না। যে কারণে নানা ধরনের ট্রল, সমালোচনা হয়।
বর্তমানে
নতুন কোনো
ছবির কাজে
যুক্ত আছেন
কিনা?
রায়হান রাফির স্বপ্নবাজি ছবির কাজে যুক্ত আছি।