তূর্ণা-উদয়নের মুখোমুখি সংঘর্ষে আবারো প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা

পুনরাবৃত্তি এড়াতে রেল যোগাযোগ ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হোক

২০০৮ সালের পর দেশে রেল খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে রেলে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়েছে। এত অর্থ ব্যয়ের পরও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছে। অভিযোগ, সিগন্যাল পেয়েও চালক তা মানেননি। ঘটনার মাধ্যমে রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ সংকট, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা অব্যবস্থাপনার চিত্র আবারো সামনে এল। রেল প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতা, প্রকৌশল বিভাগের অব্যবস্থাপনা আর অদক্ষ কর্মীদের কারণে ট্রেন দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে রেল খাতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও সে তুলনায় রেলপথ সংস্কার, ইঞ্জিন উন্নত যন্ত্রাংশ ক্রয়ের সংখ্যা কম। সিংহভাগ অর্থই গেছে ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ স্টেশনগুলো রি-মডেলিংয়ের কাজে। অথচ ইঞ্জিন বগির সমস্যায় গোটা রেল ব্যবস্থাই যে অচল হয়ে পড়ছে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ উদাসীন।

বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও রেল খাত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। দুর্নীতি, অনিয়ম অব্যবস্থাপনা খাতটি ধ্বংস করেছে। হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরও বাড়ছে না যাত্রীসেবার মান। বছরের পর বছর রেল একটি লোকসানি খাত হিসেবে চিহ্নিত। অভিযোগ রয়েছে, রেল খাতের উন্নয়নে যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তার কার্যকারিতা যাচাই করা হয়নি। কেবলই রেলকে সাজিয়ে-গুছিয়ে তোলার স্বপ্ন দেখিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্প পরিকল্পনার সম্ভাব্যতা যাচাই অবহেলিত রয়ে গেছে। প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রেও দুর্ঘটনাপ্রবণতা রোধের উদ্যোগের ঘাটতি লক্ষণীয়। সারা বিশ্বে নিরাপদ যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে পরিচিত হলেও শুধু বিনিয়োগ পরিকল্পনা দুর্বলতার কারণে রেল আজ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশে। এটি কাম্য হতে পারে না।

রেলের গতি সেবা না বাড়লেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তাতেও লাভ হয়নি। অবস্থায় রেল খাতে পরিকল্পিত বিনিয়োগ জরুরি। প্রকল্প গ্রহণের আগে সেগুলো আয়বর্ধক, লাভজনক যাত্রী বৃদ্ধি করবে কিনা, তা যাচাই করা চাই। যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি পণ্য পরিবহন সহজতর করে রেল খাতের আয়ের যে বিপুল সম্ভাবনা, তার সদ্ব্যবহার করতে হবে। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে শুধু অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া যাবে না। তাছাড়া রেলে গত কয়েক বছরে যে পরিমাণ বিনিয়োগ প্রকল্প গৃহীত হয়েছে, তা বাস্তবায়নের মতো দক্ষ কর্মকর্তার অভাব রয়েছে বলে অনুমেয়। রেল ব্যবস্থা সংস্কারে যোগ্য দক্ষ লোক নিয়োগ করতে হবে। এর মাধ্যমে রেল দুর্ঘটনা দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে।

ট্রেনকে তুলনামূলক নিরাপদ বাহন হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে রেল ভ্রমণে মানুষের আস্থায় চিড় ধরবে। রেল ব্যবস্থাকে পুরোপুরি দুর্ঘটনামুক্ত করতে এর ব্যবস্থাপনা অবকাঠামোগত ঘাটতি দূর করার বিকল্প নেই। দুর্ঘটনার কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়ার কাজটি আরো যথাযথভাবে পালন করতে হবে। প্রায় সময়ই দুর্ঘটনা ঘটছে চালক, গার্ড, স্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে। তাছাড়া শত বছরের পুরনো রেল সেতু ব্যবহার, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন, পাথরহীন রেলপথ, সংস্কারহীন পুরনো রেললাইনের কারণে রেলপথে ঝুঁকি ক্রমে চরম আকার ধারণ করেছে। এসব জটিলতা নিরসনে রেলওয়ে প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বর্তমান অবস্থায় রেলের আধুনিকায়ন, রেল লাইনের ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে বের করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া চাই।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রযুক্তির অগ্রগতি রেলকে স্পর্শ করলেও আমরা সে তুলনায় পিছিয়ে রয়েছি। খেয়াল করলে দেখা যায়, আমাদের রেলের বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই স্টেশন লোকেশন ক্রসিংগুলোয় হচ্ছে। ম্যানুয়াল ব্যবস্থায় ট্রেন চালাতে গিয়ে এমন বিপত্তি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন