চীনের পর বন্ধ হলো ভারতের বাজার

অনিশ্চয়তায় প্লাস্টিক বর্জ্য রফতানি

আনোয়ার হোসেন

প্লাস্টিক বর্জ্য রফতানি থেকে বছরে তিনশ কোটি টাকার বেশি আয় হয়। কিন্তু বছর দুয়েক আগে এসব বর্জ্যের প্রধান গন্তব্য চীনের বাজার বন্ধ হয়ে গেলে খাত বড় ধরনের ধাক্কা খায়। বিকল্প হিসেবে ভারতকে বেছে নিলেও রফতানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কমে যায় আয়। এর মধ্যে গত অক্টোবরে ভারতও প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। প্রধান দুটি বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাত এখন অনিশ্চয়তার মুখে। পরিস্থিতিতে নতুন বাজার খুঁজতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে প্লাস্টিক বর্জ্য (পেট ফ্লেকস) রফতানি থেকে আয় হয় ৪৩ মিলিয়ন ডলার বা ৩৪৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা ধরে) তবে কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আয় কমছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় ১৩ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আরো কমে ১০ মিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে। সে হিসাবে সাত বছরে খাতে রফতানি আয় কমেছে ৭৭ শতাংশ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম চারমাসে (জুলাই-অক্টোবর) রফতানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৭৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ পেট ফ্লেকস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএফএমইএ) তথ্যমতে, দুই বছর আগেও বছরে গড়ে ৫০-৬০ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য রফতানি হতো। চীনের বাজার বন্ধের পর তা গড়ে ৪০ হাজার টনে নেমে এসেছে।

পরিমাণের দিক থেকে ২০ হাজার টনের মতো ফারাক হলেও রফতানি আয়ে ব্যাপক ধস নেমেছে।

মূলত চারটি কারণে রফতানি আয় কমেছে বলে জানিয়েছেন বিপিএফএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএ কবির নোটন। তিনি বলেন, প্রথমত, পেট রেজিন পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য, যা দিয়ে প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয়। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে পেট রেজিন পেট ফ্লেকসের দামও পড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, চীনের বাজারে প্রতি টন পেট ফ্লেকসের রফতানি মূল্য ছিল ৮০০ থেকে হাজার ডলার, কিন্তু ভারতের বাজারে তা ৫০০-৫৫০ ডলার। তাছাড়া চীনের বাজারে পাঠাতে জাহাজীকরণে ব্যয় প্রতি কনটেইনারে ৭০-৮০ ডলার, সেখানে ভারতে পাঠাতে ব্যয় সাড়ে ৩০০-৪০০ ডলার।

এসবের বাইরে বছর দুয়েক আগে ইপিবির সঙ্গেভুল বোঝাবুঝিরকারণে নগদ প্রণোদনা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শতাংশ করায় খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে উল্লেখ করেন এসএ কবির নোটন।

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি মাসে সাত-আট হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। তিন হাজার টন পেট ফ্লেকস স্থানীয়ভাবে ব্যবহার হয়। বাকিগুলো রফতানি হয়।

বিপিএফএমইএ সূত্রমতে, বর্তমানে তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, মরক্কোসহ বেশ কয়েকটি দেশে অনিয়মিতভাবে সীমিত পরিমাণে পেট ফ্লেকস রফতানি হচ্ছে। তবে এসব দেশে পেট ফ্লেকসের দর চীন ভারতের তুলনায় অনেক কম।

বিপিএফএমইএ সূত্রে জানা গেছে, বাজার অনিশ্চয়তার কারণে গত কয়েক বছরে অনেক উদ্যোক্তা খাতে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। সংগঠনের নিবন্ধিত সদস্য ৮০ জন হলেও বর্তমানে নিয়মিত রফতানি কার্যক্রমে আছেন ৩০-৩৫ জন।

ব্যবসার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে চাইলে পেট ফ্লেকস রফতানিকারক টিসিএম ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. তোফায়েল আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, চীন আমদানি বন্ধ করার পর ভারতে রফতানি করা হচ্ছিল। যদিও ভারতের বাজার চীনের বিকল্প ছিল না। এখন ভারতের বাজারটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের শঙ্কায় ফেলেছে। নতুন বাজার পেলেও তা চীন বা ভারতের অভাব পূরণ করতে পারবে না।

তবে নিয়ে খুব শঙ্কার কিছু দেখছেন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন