সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড

র‌্যাবের তদন্ত নিয়ে উচ্চ আদালতের হতাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন নাহার রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জেনে হতাশা প্রকাশ করে উচ্চ আদালত বলেছেন, চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবেই এটি তালিকায় থেকে যাবে। গতকাল বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ হতাশা প্রকাশ করেন।

আদালতের নির্দেশে এদিন মামলাটির সব নথিপত্র (সিডি) নিয়ে হাজির ছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলম। তার পক্ষে আদালতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পি। হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে নিজের মামলা প্রত্যাহারের আবেদনকারী তানভীর রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

গত জুলাইয়ে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, এখন পর্যন্ত এফবিআই থেকে চারটি ডিএনএ টেস্টের মধ্যে দুটির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এ দুটি টেস্টের সঙ্গে আসামিদের মিল পাওয়া যায়নি। বাকি দুটি টেস্টের রিপোর্ট পেলে ডিএনএর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হত্যাকারীদের কল্পিত চেহারা আঁকার চেষ্টা করা হবে।

তখন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, তাহলে কি ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টের ওপর এ মামলার ভবিষ্যত্ নির্ভর করছে? কবে আসবে ডিএনএ রিপোর্ট? তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, শিগগিরই চলে আসবে। বিচারক তখন মামলা বাতিলের আবেদনকারী তানভীরের বিষয়ে বলেন, ‘একটা লোক সাত বছর ধরে আদালতে যাচ্ছে-আসছে, তারিখে তারিখে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আপনারা এখনো তদন্তই শেষ করতে পারছেন না!’

আইনজীবী ফাওজিয়া করিম তখন বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়ার কারণে তিনি (তানভীর) বিয়ে করতে পারছেন না। সামাজিকভাবে তিনি নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। এ পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, তদন্তে নতুন কোনো ক্লু (সূত্র) আছে কিনা। তদন্ত কর্মকর্তার নেতিবাচক জবাবে বিচারক বলেন, ক্লু না থাকলে এ তদন্ত দিয়ে কী হবে? চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবেই এটি তালিকায় থেকে যাবে। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মামলাটির তদন্ত শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেয়ার আরজি জানালে বিচারক বলেন, কী হবে? গত আট বছরে কিছু হয়নি, এক মাসে আর কী হবে? ডিএনএ রিপোর্ট দিয়ে কল্পিত চেহারা আঁকা ছাড়া আর কিছু হবে না। আগে আইন ছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে বা তদন্তে কিছু না পেলে তদন্ত স্টপ হয়ে যেত। পরে কিছু পেলে আবার শুরু করা যেত, এখন তো সে আইনও নেই। এরপর বিচারক তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, যে ল্যাপটপ খোয়া গিয়েছিল, সেটি কি উদ্ধার করা গেছে? জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার করা যায়নি। বিচারক তখন জানতে চান, কী কী আলামত জব্দ করা হয়েছে? তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ছুরি, বটি, কাপড় টানানোর দড়ি ইত্যাদি।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই মো. নওশের আলম রোমান হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন