রংপুর কাস্টমস

প্রথম প্রান্তিকে পূরণ হয়নি রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি রংপুর

রংপুর বিভাগে চলতি অর্থবছর (২০১৯-২০) স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যের চেয়ে ৫৫ কোটি টাকা কম রাজস্ব আহরণ হয়েছে। বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ অধিক বাড়ানো, জনবল সংকট ও রাজস্ব আহরণের অন্যতম উৎস সিগারেট খাতের কয়েকটি কোম্পানি বন্ধ থাকা এ ঘাটতির কারণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

রংপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) ২৮৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২৩০ কোটি ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যের চেয়ে রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে ৫৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তবে লক্ষ্যের চেয়ে কম হলেও এ রাজস্ব গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বেশি। জুলাইয়ে ১১২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগস্টে ৮১ কোটি ২৮ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং সেপ্টেম্বরে ৯২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে ৮৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ হয়েছে।

জানা গেছে, রংপুর বিভাগে স্থানীয় পর্যায়ে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জুন) মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫৪৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। গত অর্থবছর ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয় ১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা।

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার জন্য এক বছরের ব্যবধানে এ বিভাগে রাজস্বের বার্ষিক লক্ষ্য ৩০০ কোটি টাকার বেশি বাড়ানোকেও অনেকে দায়ী করেন। তবে রংপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের দাবি, লোকবল সংকট এবং প্রায় এক বছর ধরে রাজস্ব আহরণের অন্যতম খাত সিগারেটের উৎপাদন বন্ধ রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ। সূত্র জানায়, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে রংপুরে অবস্থিত পাঁচটি সিগারেট কোম্পানি গত বছরের অক্টোবর থেকে বন্ধ আছে। এখান থেকে প্রতি মাসে রাজস্ব আহরণ হতো ৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৪ কোটি টাকা। কোম্পানিগুলো বন্ধ থাকার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আহরণে।

এদিকে এক বছরের ব্যবধানে চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বাড়ানো প্রসঙ্গে রংপুর বিভাগীয় নগরীর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, দেশের উন্নয়নে সরকারকে রাজস্ব প্রদানের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে উল্লিখিত রাজস্ব আহরণ সত্যিই কঠিন। এতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভ্যাট কর্মকর্তাদের সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হতে পারে। নতুন নতুন সক্ষম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় এনে রাজস্ব বাড়ানো যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

রংপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিসের কমিশনার ডা. শওকত আলী সাদী বলেন, এরই মধ্যে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে প্রতি মাসে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে ১৮টি আলোচনা সভার আয়োজন করা হচ্ছে। এর মধ্যে আট জেলায় অবস্থিত ডিভিশন অফিসে দুটি করে এবং হেড কোয়ার্টারে দুটি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এই প্রথম প্রতিটি জেলায় তামাক শিল্পের ওপর নিবারক (প্রিভেন্টিভ) তত্পরতা বাড়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতি সপ্তাহে কাজের বাধ্যতামূলক প্রতিবেদন নেয়া হচ্ছে। এতে রাজস্ব আহরণ বাড়ছে। গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত তামাক শিল্প থেকে রাজস্ব এসেছিল ৬৭ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি বছরের ওই সময় পর্যন্ত তামাক শিল্প থেকে রাজস্ব এসেছে ৯১ কোটি টাকা। তবে পাঁচটি সিগারেট কারখানা বন্ধ থাকায় একটা বড় অংকের রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া জনবল সংকটের কারণে রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায় রাখা কঠিন হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন