দেশে ইসবগুলের ভুসি উৎপাদনের সম্ভাবনা

ইসবগুল বা ইসবগুলের ভুসি আমাদের দেশে কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় একটি বহুল ব্যবহূত পণ্য। অনেকেই আমরা রোজার সময় শরবতের সঙ্গেও এটি খাই। কিন্তু খুব কম লোকেই জানি, এটি পাওয়া যায় কী থেকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া ইসবগুল চাষের উপযোগী হলেও ফলন কম হওয়ায় এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিশেষ ধরনের গ্রাইন্ডিং মিল না থাকায় তা চাষ হচ্ছে না। আমদানি করেই মেটানো হয় ইসবগুলের চাহিদা। ভারত থেকেই মূলত আমদানি করা হয় ইসবগুল। তবে বাংলাদেশে ইসবগুল চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। ইসবগুল (বৈজ্ঞানিক নাম Plantago ovata আর ইংরেজি নাম Blond Psyllium, Desert Indian wheat psyllium) হচ্ছে Plantaginaceae পরিবারের Plantago গণের একটি গুল্ম। এটি একটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার। পাতা লোমযুক্ত ১০-২০ সেন্টিমিটার লম্বা ও এক-দুই সেন্টিমিটার চওড়া হয়। পাতাগুলো গাছের গোড়ায় মাটির ওপর গোলাপ ফুলের পাপড়ির মতো বিপরীতভাবে সাজানো থাকে। ফুল সাদা রঙের, যা স্পাইকের দণ্ডে গুচ্ছাকারে সাজানো থাকে। ফল দুই কোষবিশিষ্ট, সাত-আট মিলিমিটার লম্বা, যার ভেতরে তিন মিলিমিটার লম্বা বীজ থাকে। বীজ দেখতে নৌকার মতো, যার খোসায় পিচ্ছিল মিউসিলেজ বা শ্লেষ্মা থাকে। উপমহাদেশে ইসবগুলের চাষ সবচেয়ে বেশি হয় ভারতের গুজরাট রাজ্যে। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে আছে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ। গুজরাট থেকে আমেরিকা ও ইউরোপে ইসবগুল রফতানি হয়।

ইসবগুল চাষ পদ্ধতি

জলবায়ু: ইসবগুল শীতকালীন ফসল। বীজ গজানোর উপযুক্ত তাপমাত্রা হল ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পরিপক্ব পর্যায়ে ৩০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে ভালো। পরিপক্ব পর্যায়ে বৃষ্টি হলে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

মাটি: সুনিষ্কাশিত বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি ইসবগুল চাষের উপযোগী।

জমি তৈরি: বীজ ক্ষুদ্র হওয়ায় মাটি খুব ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। ফসলটি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই পানি নিষ্কাশনের জন্য জমিতে সঠিকভাবে নালা তৈরি করতে হবে।

বীজ হার: সাত-আট কেজি/হেক্টর বীজ সারি বা ছিটিয়ে বোনা যায়। তবে সারি করে লাগালে পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। ২৫-৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ ছোট বিধায় মাটির বেশি গভীরে বপন করলে তা গজাবে না।

বপন সময়: অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। দেরিতে বুনলে ফলন কমে যাবে।

সার প্রয়োগ: হেক্টরপ্রতি ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া, ৭৫-১২৫ কেজি টিএসপি, ৫০-৭০ কেজি মিউরেট অব পটাশ ও ১০-১২ টন গোবর সার দরকার হয়। অর্ধেক নাইট্রোজেন ও বাকি সব সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

পানি সেচ: ভালো ফলনের জন্য ৮-১০টি সেচ প্রয়োজন হয়। তবে কমপক্ষে তিনটি সেচ দেয়া খুবই জরুরি। বীজ বপনের পর পরই একটি সেচ দিতে হবে। বপনের ছয়-সাতদিন পর বীজ গজায়। দ্বিতীয় সেচ দিতে হবে ২০-২১ দিন পর। তৃতীয় সেচ দিতে হবে শীষ বের হওয়ার সময়।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন