লোকনাট্য দলের নতুন প্রযোজনা বুদ্ধদেব বসুর গল্প অবলম্বনে নির্মিত নাটক ‘আমরা তিনজন’ মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। আগামী শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চস্থ হবে। নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকীর নির্দেশনায় এটি নাটকটির ষষ্ঠ প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে।
১৯২৭ সালে ঢাকার পুরানা পল্টন। বিকাশ, অসিত ও হিতাংশু তিন বন্ধু। দিনের বেশির ভাগ সময় তিন বন্ধু একসঙ্গে থাকে, যতটা ও যতক্ষণ থাকা সম্ভব। তিন বন্ধু একে অন্যের প্রেমে পড়ে আবার তিনজনই একসঙ্গে অন্য একজন মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়। তার নাম অন্তরা। বাড়ির সবাই ডাকে তরু বলে। তবে তিন বন্ধুর কাছে মেয়েটির নাম হয়ে যায় ‘মোনালিসা’। একদিন কাকতালীয়ভাবে রাস্তায় তাদের সঙ্গে দেখা হয় মোনালিসা ও তার মা-বাবার। মোনালিসার বাবা দে সাহেব তাদের বাসায় আমন্ত্রণ জানায়। বৃষ্টিমুখর একটি দিনে তারা মোনালিসার বাড়ি যায়। তবে মোনালিসার সঙ্গে তেমন কোনো কথা হয় না। এর মধ্যেই মোনালিসা অসুস্থ হলে তার মা-বাবা তিন বন্ধুর সহায়তায় তাকে সুস্থ করে তোলে।
হঠাৎ একদিন মোনালিসার মা তাদের ডেকে জানায় মোনালিসার বিয়ের সংবাদ। বিয়ের পর মোনালিসা চলে যায় কলকাতা। একদিন হঠাৎ জানা গেল মোনালিসা ঢাকায় আসছে এবং সে অন্তঃসত্ত্বা। এক অমাবশ্যার রাতে প্রসব বেদনায় ছটফট করতে থাকে মোনালিসা। শীতের রাতে, মাঠের মধ্যে, না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, অদৃষ্টের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিন বন্ধু রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষা করতে থাকে। ভোরের প্রথম ছাইরঙা আলোয় ওরা দেখতে পায় দে সাহেবের বেদনার্ত নির্বাক মুখ। রাশি রাশি ফুল আরো কত কিছু দিয়ে সাজানো হলো মোনালিসার শবদেহ। তারপর মোনালিসার অন্তিম যাত্রা।
তিন বন্ধুর এ গল্প নিয়েই নাটকটি নির্মিত হয়েছে। নির্দেশক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমি যখন যে কাজটি করি, মনে হয় এটাই আমার প্রিয় কাজ, অনেক ভালোবাসার, অনেক আদরের। ‘আমরা তিনজন’ নাটকের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গত বছরের স্বপ্নের কাজ প্রত্ননাটক ‘মহাস্থান’, এ
বছর ‘আমরা তিনজন’ গল্পটি পড়ার পর থেকেই নাটক করার ভাবনা আমাকে তাড়িত করে। গল্পটা বারবার পড়ি আর রবীন্দ্রনাথের গান দিয়ে তার আবহ তৈরি হয়ে যায়। নির্মিত হয়ে যায় একটি চরিত্র, অভিনেতা হিসেবেও যুক্ত হয়ে যাই। ষাটের দশকের ঢাকার স্মৃতি আমায় প্রাণিত করে। বুদ্ধদেব বসুর মতো জিনিয়াসের সান্নিধ্য অনুভূত হয়। রবীন্দ্রনাথ সাহস দেয়। নির্মিত হয়ে যায় দৃশ্যকাব্য ‘আমরা তিনজন’।