‘সেলিব্রিটি’র রোজনামচা

তানভীর শাতিল

সেলিব্রিটি...!’ সেলিব্রিটি শব্দটাকে বর্তমান সময়ে আমরা আসলে কীভাবে অনুধাবন করি? সেলিব্রিটি আসলে কি মিডিয়ার সৃষ্টি বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে? এটা অনেকটাই ধরে নেয়া যায়, বর্তমান সময়ে সেলিব্রিটি বলতে আমরা যা বুঝি, তা আসলে মিডিয়ারই এক ধরনের সৃষ্টি। কিন্তু বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এমন অনুসিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অন্য রকম নতুন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করে। আমরা যারা শহুরে জীবনে অভ্যস্ত, তথাকথিত মধ্যবিত্তীয় ঔপনিবেশিক শিক্ষায়শিক্ষিত’, তারা আসলে সেলিব্রিটি বলতে যে বিষয়টা অনুধাবন করি কিংবা যে শাব্দিক দ্যোতনার প্রেষণা পাই, গ্রামের বা তৃণমূল পর্যায়ের মানুষগুলো কি একই রকমের দ্যোতনা অনুধাবন করে? হ্যাঁ, বর্তমান সময়ে যোগাযোগ প্রযুক্তির বিস্তর বিকাশের ফলে এর শব্দগত পরিচয় হয়তো তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে, কিন্তু সন্দেহ জাগে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণী সেলিব্রিটি বলতে যে দ্যোতনা পায়, তৃণমূলের গ্রামীণ সাধারণ মানুষ কি একইভাবে তা বোঝে!

এখানে বিষয়টা পরিষ্কার করার জন্য একটা উদাহরণ টানা অত্যন্ত প্রয়োজন বোধ করছি। যেমন হিরো আলমের সেলিব্রিটি হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া আর হালের গায়ক নোবেলের সেলিব্রিটি হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মাঝে বিস্তর ফারাক লক্ষ করা যায়। এখানে একটা বিষয় খুব সচেতনভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, পৃষ্ঠপোষকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বর্তমান পুঁজিবাজারভিত্তিক সেলিব্রিটি নির্মাণের ক্ষেত্রে। বর্তমান সময়ের বাজারভিত্তিক সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক পরিসর তা কোনোভাবেই কেবল আর ব্যক্তিক প্রতিভানির্ভর নয়, সেটা একটু খেয়াল করলেই চোখে ধরা পড়ে। বর্তমান সময়ে সেলিব্রিটি হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মাঝেও বিভিন্ন স্তরায়ন পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু একটা বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সেলিব্রিটির উদ্ভব কোনো না কোনোভাবে বাজারের বিকাশে ভূমিকা রাখে। উদাহরণ দিয়ে বলতে হলে অনেক উদাহরণই হাজির করা সম্ভব। যেমন জাতীয় পর্যায়ের মূল স্রোতের গণমাধ্যমগুলোয় আঞ্চলিক পর্যায়ে সেলিব্রিটি হয়ে ওঠা হিরো আলমের উপস্থিতি কিংবা গ্রামীণ সমাজ বা উপজেলা, জেলা সদরগুলোয় লোকাল কেবল নেটওয়ার্কভিত্তিক যে সম্প্রচার রীতি; তাতে দেখা যায়, স্থানীয় পর্যায়ে এমন অনেক কনটেন্ট তৈরি হয়, যা আসলে স্থানীয় চ্যানেলগুলোয় সম্প্রচারিত হয় এবং সেখানকার চরিত্রগুলোও স্থানীয়ভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। বলা যেতে পারে স্থানীয় সেলিব্রিটি হয়ে ওঠে। এমনকি স্থানীয় কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কিংবা দোকানের স্থানীয়ভাবে নির্মিত বিজ্ঞাপনের চরিত্রগুলোও স্থানীয় পর্যায়ে সেলিব্রিটি হয়ে ওঠে। আবার আরো মাইক্রো লেভেলে গিয়ে বিষয়টা দেখার চেষ্টা করা হলে দেখা যায়, স্থানীয় হাটবাজারে নানা ধরনের কবিরাজি বলবর্ধক ওষুধের পসরা সাজিয়ে বসা ক্যানভাসারের আসরের ক্যারেক্টারগুলোও ক্ষুদ্র পরিসরে গ্রামীণ বাজারে আসা বেশকিছু মানুষের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে, পরিচিত হয়ে ওঠে তাদের নানা প্রতিভা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। 

এছাড়া স্থানিক পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, সামাজিকভাবেশ্রদ্ধেয়অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে তার পরিচিতি কর্মকাণ্ডের জানান দিচ্ছেন ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে এমনও দেখা যায়, অনেকে আখেরে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানা সামাজিক কিংবা জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার ছবি, ভিডিও, লেখনী ইত্যাদি শেয়ার করেন। বিষয়ে স্থানীয় কিছুু কম্পিউটারের দোকানের দ্বারস্থ হতেও দেখা যায় অনেককে, কোনো উৎসব-পার্বণের আগে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা দেয়ার উছিলায় ডিজিটাল প্লাটফর্মে ব্যবহারের জন্য পোস্টার বানানোটা বিশেষভাবে নজরে আসে। নিজের সুন্দর একটি ছবির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-নেত্রীর ছবি সংযোজন করে বাহারি সব পোস্টার অনলাইনে ভাসতে দেখা যায়। 

আসলে বাস্তবতার নিরিখে দেখতে গেলে বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের মাঝে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন