চবিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীকে মারধর, অভিযুক্ত শোকজ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শুক্কুর আলম নামে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তকে শোকজ করেছে কর্তৃপক্ষ। আগামী তিনদিনের মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দানের নির্দেশের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পেলেই অভিযুক্তকে আটক করতে বলা হয়েছে পুলিশকে। 

সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ আদেশ দেওয়া হয়।

এর আগে গত রোববার রাতে গায়ে কনুই লাগায় ওই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ কর্মী মোরশেদুল আলম রিফারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে ওই রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন প্রতিবন্ধী ছাত্র সমাজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (ডিসকু) নামে একটি সংগঠন।

মারধরের শিকার শুক্কুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে অধ্যায়নরত। আর অভিযুক্ত মোরশেদুল আলম রিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের কর্মী বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমরা অভিযুক্ত মোরশেদুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাই তাকে শোকজ করে তিন দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে পরিবর্তীতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে দেখা মাত্র আটক করতে বলা হয়েছে পুলিশকে।’

ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী শুক্কুর আলম বলেন, ‘রোববার রাতে সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ের একটি দোকানে খাবার কিনতে গিয়েছিলাম। সেখানে বসে থাকা ছাত্রলীগের কর্মী মোরশেদুলের গায়ে আমার কনুই লাগে। মোরশেদুল সোজা হয়ে দাঁড়াতে বলেন আমাকে। কীভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াবো- জানতে চাইলে মোরশেদুল আমাকে মারধর করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। সাত-আট মাস আগে আমার বাম চোখে সার্জারি করা হয়েছে। আমি দুচোখের একটিতেও দেখি না। তাই অনিচ্ছাকৃতভাবে তার গায়ে কনুই লেগেছে। মারধরের পর আমার সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।’

শুক্কুরের সহপাঠীদের দাবি, মোরশেদুল আলম নিয়মিত মাদক সেবন করেন। এর আগে তিনি এক রিকশা চালককেও মারধর করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক শুভাশীষ চৌধুরী বলেন, চোখে আঘাত পাওয়ায় ওই ছাত্রকে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ব্যথা না কমলে প্রয়োজনে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।

মারধরের ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত মোরশেদুল আলম রিফাতের মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ ঘটনায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিজয় উপগ্রপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক এসএম জাহেদুল আউয়াল। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রকে মারধর করা অমানবিক কাজ। মারধরকারী ছাত্রলীগের কর্মী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের ঘটনা আমরা সমর্থন করি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা বলেছি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।’

প্রতিবন্ধী ছাত্র সমাজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। মঙ্গলবার আমরা প্রশাসনকে একটি আল্টিমেটাম দিব। যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীকে গ্রেফতার করা না হলে বুধবার থেকে আমরা আন্দোলনে যাবো।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন