ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪৭ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি,সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪৭ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। এছাড়াও এসময় ৫ হাজার ১৭টি মাছের ঘের এবং ১৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন সম্পূর্ণ ও ১০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  ক্ষতি হয়েছে শীতকালীন সবজি, পান, সরিষা ও কুলসহ অন্যান্য ফসলেরও। 

সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সাতক্ষীরার উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালীনি, মুন্সিগঞ্জ, রমজাননগর ও কাশিমাড়িসহ আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা ও শ্রীউলা এলাকাসহ অন্যান্য উপজেলার অধিকাংশ কাচা ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব এলাকার মৎস্য ঘের ও ফসলের ক্ষেত। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছগাছালি। এতে রাস্তায় গাছ পড়ে অনেক এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।  তার ছিড়ে ও খুঁটি উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে এলাকাগুলো। 

প্রবল ঝড়ে শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালী ইউনিয়নের তারাণীপুরে দেওয়াল চাপা পড়ে ভ্যান চালক পলাশ ও তার স্ত্রী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া শনিবার রাত ৯টার দিকে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামের আবুল কালাম (৬০) আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। 

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ‘ভারতে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল হয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল রোববার ভোর ৫টা থেকে ৮১ কিলোমিটার বেগে সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে। তিনি আরো বলেন, শনিবার রাত থেকে গতকাল (রোববার) সকাল ৯টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ১৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’

গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, তার ইউনিয়নের চার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অধিকাংশ গাছ উপড়ে পড়েছে। তবে, মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে নিরাপদে আছে। 

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে  উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ কাচা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। এই অ লের অধিকাংশ মাছের ঘের ও ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। গাছপালা পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে। 

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বালিথা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, তার ৪ বিঘা পরিমার জমির কর্তন করা রোপা আমন ধান বৃষ্টির পানিতে সম্পূর্ন ভাবে তলিয়ে গেছে। একই গ্রামের বর্গা চাষি সজ্জত সরদার জানান, ৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চলতি মৌসুমে রোপা আমন চাষ করেছেন। শনিবারে ধান কর্তন করার পর তা মাঠে রেখেছেন। দু‘একদিনের মধ্যে এসব কর্তন কৃত ধান বাড়ি উঠাবে বলে আশা ছিলো তার। কিন্ত শনিবার রাতে প্রবল ঝড় এবং সেই সাথে ভারি বর্ষনে ক্ষেতের সমস্ত ধান পানিতে ডুবে গেছে। 

জেলার আশাশুনি উপজেলার গোনাকরকাটি গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী আব্দুল বারি জানান, তার ১৫০ শত বিঘা চিংড়ি ঘের সম্পূর্ন ভেসে গেছে। এতে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার মাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানান তিনি। 

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের সোনাতলা এলাকার ঘের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলাম ও নিবাশ মন্ডল জানান, তাদের একেক জনের দুই‘শ বিঘা মাছের ঘের তলিয়ে গেছে প্রবল বর্ষণে। ভেসে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার চিংড়ি ও সাদা মাছ।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার আনুমানিক মুল্য ১৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এছাড়া শীতকালিন ৮৪০ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে গেছে। যার ক্ষতির পরিমান ৩৬২ কোটি ৭৮ লাখ। একইভাবে ৬০ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়ে গেছে, যার মূল্য ৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এসময় ৫০০ হেক্টর পরিমান জমির সরিষা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ সরিষার মূল্য ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং ১০০ হেক্টর জমির কুল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার ৫ হাজার ১৭টি চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। এসময় ৪১৪ মেট্রিকটন চিংড়ি ও সাদা মাছ ভেসে গেছে। যার আনুমানিক মুল্য ১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন