অযোধ্যায় মন্দিরের রায়ে সন্তুষ্ট নয় সুন্নি বোর্ড

ভারতের অযোধ্যার আলোচিত বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি মামলার রায়ে সেই বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানে একটি মন্দির গড়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে মসজিদ নির্মাণে সরকারকে অন্যত্র পাঁচ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির আদালত। তবে এমন রায়ে সন্তুষ্ট নয় সেখান মুসলিম সংগঠন সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।

রায় ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী জাফারিয়াব জিলানি বলেন, ‘আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। এতে অনেক ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সুযোগ আছে কি না এবিষয়ে আলোচনা করব। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ একইসঙ্গে আদালতের এই রায়ের প্রতি সম্মান রেখে সকলকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ভারতের কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ আরএসএস এর প্রধান মোহন ভগবত রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘এই রায়ের ফলে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের পথ প্রশস্ত হয়েছে।’ ওই স্থানে রাম মন্দির নির্মাণে মুসলমানদেরও সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। 

এর আগে দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের মধ্যদিয়ে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় মামলার রায় দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এর রায় ঘোষণা করেন।

এদিকে আদালতের রায় মেনে নিয়ে সবাইকে শান্তি বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদি। এ রায়কে কেন্দ্র করে সারা ভারত জুরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সেই দেশের আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। এছাড়া জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগামী রোববার থেকে শহরে কারফিউ জারি করা হবে বলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

দীর্ঘ শুনানির পর ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল বাবরি মসজিদের ভূমি তিন ভাগে ভাগ করে বণ্টনের আদেশ দেয়। আদালতের নির্দেশনায় মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড, নিরমাজি আখড়া আর রামনালা পার্টিকে সেখানকার ২ দশমিক ৭ একর জমি সমানভাগে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। হিন্দু-মুসলিম দুই পক্ষই সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করেছিল। শুনানি চলেছিল লাগাতার ৪০ দিন। শুনানির শেষে রায় সংরক্ষিত করে রাখে শীর্ষ আদালত।

শনিবার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় ঘোষণার এক পর্যায়ে বলেছেন, হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এখানেই রামের জন্মভূমি ছিল। তবে কারও বিশ্বাস যেন অন্যের অধিকার না হরণ করে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) খননের ফলে যে সব জিনিসপত্র পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট যে সেগুলি অনৈসলামিক। তবে এএসআই এ কথা বলেনি, যে তার নীচে মন্দিরই ছিল। বিচারপতি বলেছেন, এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় যুক্তিযুক্ত ছিল। রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বাবরের সহযোগী মীর বাকি মসজিদ তৈরি করেছিলেন, তবে কবে মসজিদ তৈরি হয়েছিল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

অযোধ্যায় মোগল আমলে তৈরি বাবরি মসজিদটি ভেঙে ফেলার পর ভারতে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় কমবেশি দুই হাজার মানুষ নিহত হন। মসজিদটির জমির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সেটি গুঁড়িয়ে দেয় কট্টরপন্থী হিন্দুরা। তাদের দাবি, বাবরি মসজিদের জায়গাতেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভগবান রামের জন্ম হয়েছিল। রামমন্দির ভেঙে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। তবে মুসলিমরা বলছে, মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরির কোনও প্রমাণ নেই। তাদের দাবি, ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বলপূর্বক ঐতিহাসিক মসজিদটি ভেঙে দেয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। তাই সেখানে মসজিদটি পুনঃস্থাপনই যৌক্তিক। পড়ে বিষয়টি আদালতে গড়ায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন