নবাববাড়ি দর্শন...

সুমন্ত গুপ্ত

ঘুম থেকে উঠে ক্যালেন্ডারের পাতায় তাকাতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল, কারণ দেখতে দেখতে ছুটি শেষ হয়ে গেল। তখনই মনস্থির করলাম আজই বের হব। দূরে হোক আর কাছে, কোথাও ঘুরে আসতেই হবে। কিন্তু কোথায় যাই, এর মাঝে উপস্থিত হলো অনিক। বললাম কোথায় যাওয়া যায় বল তো? অনিক বলল, দাদা তুমি নবাবগঞ্জে কলাকোপা ইউনিয়নটিতে যেতে পারো, সেখানে কয়েকটা রাজবাড়ি আছে শুনেছি। তখনই আমি গুগলে সার্চ দিয়ে দেখে নিলাম কীভাবে যাওয়া যায় দোহার। ফোন দিলাম গাড়ির জন্য। গাড়িও ঠিক করে ফেললাম।

সকাল ১০টায় গাড়ি আসবে, তাই সবাইকে বললাম দ্রুত তৈরি হয়ে নিতে। ঘড়ির কাঁটায় ১০টা হতেই গাড়ি এসে উপস্থিত, কিন্তু আমাদের ভ্রমণসঙ্গীরা তখনো তৈরি হয়নি। অগত্যা ৩০ মিনিট বিলম্বে যাত্রা করতে হলো। আমরা আমাদের অস্থায়ী ডেরা থেকে বের হলাম নতুন গন্তব্যপানে। গাড়িতে উঠে কিছু দূর যেতেই আমাদের পাইলট সাহেব ঘোষণা দিলেন আপনারা যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে কোনো পেট্রল পাম্প নেই, তাই মহাসড়কের কাছের পেট্রল পাম্প থেকে তেল নিতে হবে। যা-ই হোক, তেলের ট্যাংক পূর্ণ করে আমরা যাত্রা করলাম গন্তব্যপানে।

আমাদের ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে আজ আছে আমাদের পরিবার, সঙ্গে আরো আছে পরিবারের নিকট বন্ধু তপন ঘোষ, বিশ্বনাথ কর্মকার কাকু। কিছু দূর যাওয়ার পর মহাসড়কের বেহালে আমাদের অবস্থা খারাপ হওয়ার উপক্রম। আমাদের অবস্থা দেখে পাইলট সাহেব অভয় দিলেন, আরেকটু সামনে গেলেই ভালো রাস্তা পাবেন। পদ্মা সেতুতে যাওয়ার জন্য সড়কের কাজ চলছে, তাই এ অবস্থা; কিছু দূর গেলে পরে মসৃণ সড়ক পাবে নগরবাসী। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা চলছি। দেখতে দেখতে ২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। সবার ছটফট দেখে বোঝা গেল পেটে কিছু দিতে হবে। কিন্তু রাস্তা তো আর শেষ হতে চায় না! নবাবগঞ্জ যেতে যেতে পথের ধারে বয়ে চলা ইছামতী নদীর দেখা পেলাম। নদীর ঢেউয়ের শব্দ যেন বয়ে নিয়ে আসছে প্রশান্তি। নদীর পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এক কথায় অসাধারণ। যত দূর চোখ যায়, দেখা যায় সবুজ প্রান্তর। অসংখ্য গাছগাছালি আর পাখির ডাক যেন মনে করতেই দেয় না ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে নেই। পাইলট সাহেব ঘোষণা দিলেন আপনাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে চলে এসেছে। আমরা এসে উপস্থিত হলাম প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ব্রজেন সাহার জমিদার বাড়ির সদর দরজায়।

ব্রজেন সাহা আশির দশকে বাড়িটি স্বনামধন্য এক উকিলের কাছে বিক্রি করে দেয়ার পর বর্তমানে জজবাড়ি হিসেবেই পরিচিত; এটি বললেন এলাকার লোকজন। তবে এ বাড়িতে প্রবেশে অনুমতি নিতে হয়। আমরা গাড়ি থেকে নেমে দ্বার অতিক্রম করে প্রবেশ করলাম ভেতরে। দোতলা বাড়িটি দেখলেই বোঝা যায় সেকালের জমিদারদের শৌখিনতা। অসম্ভব সুন্দর বাড়িটির চারদিকে সুবিশাল বাগান এবং দুটি মনোরম পুকুর। সেসঙ্গে দেখলাম পোষা কিছু চিত্রা হরিণ। এরপর আমরা গেলাম পাশেই অবস্থিত উকিল বাড়িতে। এখানে আবার ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হলো আমাদের। ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম নান্দনিক কারুকাজমণ্ডিত ভবন। আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি, আর ছবি তুলছি। হঠাৎ লক্ষ করলাম আমাদের ভ্রমণসঙ্গী বাবা, তপন ঘোষ, বিশ্বনাথ কাকু উধাও। দিলাম ফোন কোথায় তোমরা। জবাব এল তোমরা ঘুরতে থাকো আমরা আসছি। কিছু সময় পর উপস্থিত বাবা আর তার বন্ধুরা, হাতে শুকনো খাবার-দাবার। খাবার পেয়ে সবাই খুশি। সেই কখন দানাপানি পড়েছে পেটে। এবার আমরা সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম। গ্রামের রাস্তায় প্রবীণ এক বিক্রেতা বসেছেন পাঁপড় বিক্রির জন্য। গরম গরম ভেজে দিচ্ছেন আগ্রহী ক্রেতাদের। আমরাও গিয়ে ভাগ বসালাম সেখানে। গরম পাঁপড় অসাধারণ স্বাদ। বেশ কয়েকজন বিক্রেতা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন