মন্থরতা কেটে স্থিতিশীলতার আভাস বিশ্ব অর্থনীতিতে

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি দশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির ভয়াবহ মন্দার সবচেয়ে খারাপ পর্যায়টি হয়তো পার হয়ে গেছে, বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি থেকে সে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভসহ (ফেড) বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদহার কর্তন এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সৃষ্ট আশাবাদ আর্থিক বাজারগুলোয় আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। যার প্রভাবে সাম্প্রতিক কিছু পতনের পর অর্থনৈতিক নির্দেশকগুলো স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ।

যদিও এখন পর্যন্ত অর্থনীতি শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়নি। তবে কয়েক সপ্তাহ আগেও বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার দিকে অগ্রসর হওয়া নিয়ে যে ভীতি তৈরি হয়েছিল, হয়তো তা অনেকটাই দূর হয়েছে। বর্তমান এ পরিস্থিতিতে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ও অন্য নীতিনির্ধারকরা অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও মুদ্রানীতি শিথিল করা থেকে বিরতি নিতে পারবেন।

সিঙ্গাপুরের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভিড মান বলেন, ‘২০১৯ সালের বদলে ২০২০ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল হওয়ার মতো একাধিক কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো তিনিও আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হওয়ার আশা করছেন।

গত মাসে জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কোম্পানির বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং সূচক ছয় মাস ধরে সংকুচিত হলেও উৎপাদন ও কার্যাদেশ শক্তিশালী হওয়ায় সূচকটি ধনাত্মক টেরিটরির দিকে অগ্রসর হয়েছে। বাজারে আস্থা ফিরে আসার কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি।

যুক্তরাষ্ট্রে অক্টোবরে ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্টের (আইএসএম) কারখানা কার্যক্রম পরিমাপক সূচক স্থিতিশীল হয়েছে। একই সঙ্গে গত শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দেখা গেছে এবং আগের দুই মাসের সংশোধিত পরিসংখ্যানে প্রকৃত নিয়োগ বাড়ার কথা বলা হয়েছে। আইএসএমের সেবা খাতের সূচকেও উন্নতির আভাস পাওয়া গেছে।

ইউরোপের ক্ষেত্রে বাণিজ্যযুদ্ধ ও ব্রেক্সিটের চাপে সংকুচিত হওয়ার পর অঞ্চলটির অর্থনীতিতেও সাময়িক উন্নতির লক্ষণ দেখা গেছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতি পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে এবং ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি এরই মধ্যে মন্দায় থাকলেও অক্টোবরে দেশটির ম্যানুফ্যাকচারারদের মধ্যে প্রত্যাশা বাড়তে দেখা গেছে বলে ইফো ইনস্টিটিউট জানিয়েছে।

এশিয়ার ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ার সেমিকন্ডাক্টরের মজুদ দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে চলে আসে, যা মূলত বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতের পতন শেষ হওয়ার প্রতিফলন।

এ মুহূর্তে আর্থিক বাজারগুলো ধীরে ধীরে আশাবাদী হয়ে উঠছে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টক সূচকগুলো সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছে এবং ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ডও বৃদ্ধি পায়। ইউরোপীয় ও এশীয় শেয়ারবাজারগুলো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার বিলিয়নেয়ার হেজ ফান্ড ম্যানেজার পল টিউডর জোন্স বলেন, এ মুহূর্তে যেসব  রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো অত্যন্ত সহায়ক। ফলে শেয়ারবাজারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছানো কোনো অবাক করার মতো ঘটনা নয়। আক্ষরিক অর্থেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শক্তির জন্য এটা সবচেয়ে অনূকূল পরিবেশ।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এ সম্ভাব্য ইতিবাচক পালাবদলের অন্যতম একটি কারণ বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদহার কর্তন। ব্লুমবার্গ নজরদারিতে থাকা ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলতি বছর অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান সুদহার কর্তন করেছে। এর মধ্যে ফেড এখন পর্যন্ত তিনবার সুদহার কমিয়েছে ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) সুদহার ঋণাত্মক টেরিটরির দিকে নিয়ে গেছে।

এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি বাণিজ্য চুক্তিরফেজ ওয়ান স্বাক্ষরের কাছাকাছি রয়েছেন, এমন আশাবাদও বাজার চাঙ্গা করে তুলেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন