উৎপাদনশীলতা-বিষয়ক প্রথাগত চিন্তার পর্যালোচনা প্রসঙ্গে

ডিয়ান কইলে

সাধারণতউৎপাদনশীলতা শব্দটি গাড়ি থেকে শুরু করে ওয়াশিং মেশিন, সকালের নাশতায় পরিবেশিত খাদ্যশস্য কিংবা জুতাসহ বিভিন্ন অপরিহার্য পণ্য উৎপাদনের শিল্প সমাবেশের (ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসেম্বলি লাইন) কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়। উল্লিখিত শব্দটি আবাদকৃত ফসল, জবাইকৃত পশু ও নির্মাণকৃত ঘরবাড়ির প্রতিচ্ছবিও আমাদের চোখের সামনে মূর্ত করে তোলে। কিন্তু আলোচ্য শব্দটি হেয়ারকাট, টেলিভিশিন স্ট্রিমিং কিংবা বন্ধকি (মর্টগেজ) বিষয়ক চিন্তাগুলো সম্ভবত মানুষের মনে খুব একটা পরস্ফুিটন করে তোলে না। তবে প্রথাগত চিন্তায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে উৎপাদনশীলতা পরিমাপে অনেক ক্ষেত্রে বস্তুগত পণ্যের সঙ্গে নিবর্স্তুক পণ্য ও সেবার অবদান হিসাবে নেয়ার চল শুরু হয়েছে।

আজকাল অনেক অর্থনীতিবিদই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গেটোটাল ফ্যাক্টর প্রডাক্টিভিটি বিষয়টি বিবেচনায় নেন, দুটিকে সমান গণ্য করেন। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির রবার্ট গর্ডন অনুমান করেন, আরো কিছুদিন উৎপাদনশীলতা প্রবৃদ্ধির অধোগতি অব্যাহত থাকবে, যেমনটা চলতি মধ্য শূন্য দশক থেকে অধিকাংশ উন্নত অর্থনীতিতে হয়ে এসেছে। তার দৃষ্টিতে এর পেছনে বড় কারণ হলো ফ্লাশ টয়লেট, বেতার ও অন্তর্দহন ইঞ্জিনের (ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিন) মতো আগের অগ্রগতির চেয়ে চলতি ডিজিটাল উদ্ভাবন কম রূপান্তরমূলক।  

একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার, নেতৃস্থানীয় ওইসিডিভুক্ত অর্থনীতিগুলোয় সেবা বা নির্বস্তুক পণ্য কেনায় বর্তমানে প্রতি ৫ মার্কিন ডলারের মধ্যে প্রায় ৪ ডলারই ব্যয় করা হয়। অর্থনীতিগুলোর এনির্বস্তুকরণের বিষয়টি (ডিমেটারিয়েলাইজেশন) ১৯৯০-এর দশকে আমি পর্যবেক্ষণ করেছি। সম্প্রতি অ্যান্ড্রু ম্যাকাফির মতো ডিজিটাল অর্থনীতি বিশেষজ্ঞও এটিকে চিহ্নিত করেছেন, নতুন করে আবিষ্কার করেছেন। এটি আমাদের উৎপাদনশীলতা-বিষয়ক প্রথাগত বোঝাপড়া জটিল করে তুলছে।

প্রকৃতপক্ষে বস্তুগত পণ্যের উৎপাদন সত্ত্বেও চলতি বৈশ্বিক অর্থনীতির অনেকটাই অবয়ব নিচ্ছে নির্বস্তুক ফ্যাক্টরের বর্ধিষ্ণু সংখ্যা দ্বারা। সান্তা ফে ইনস্টিটিউটের সেথ লয়েড যেমনটা উল্লেখ করেছেন, খারাপ আবহাওয়া বা রোগের বিপরীতে একজন কৃষকের হেজিং এখন ধারণার জগেক অনেকটাই পরিচালনা করে।   

অতীতে যেখানে কৃষকরা এক ধরনের শস্য উৎপাদনের ব্যর্থতায় অন্য শস্যগুলো উৎপাদন বা গবাদিপশু পালন বাড়িয়ে নিজেদের সুরক্ষা করত, যাকে আমরা বলতে পারি ভৌত বৈচিত্র্যায়ণ (ফিজিক্যাল ডাইভারসিফিকেশন); এর বিপরীতে আজকাল তারা নিজেদের সুরক্ষা করছে প্রধানত মাটি পরীক্ষা ও জলবায়ু অবস্থা মূল্যায়নের মতো কৃষিবিজ্ঞানের প্রয়োগ বা অপশন মার্কেটে অংশগ্রহণ দ্বারা। সেচের মতো নতুন প্রযুক্তিগুলো প্রবর্তনসহ এসব নির্বস্তুক পণ্য নানা গোলযোগ সৃষ্টি করে, যেটি ম্যাকাফি পর্যবেক্ষণ করেছেন একই পরিমাণ উপকরণ (ইনপুট) থেকে উৎপাদিত শস্যের পরিমাণে। এখনো কৃষির প্রসঙ্গ এলে এর চূড়ান্ত ফল সহজেই নির্ণয়যোগ্য; উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, অন্য অনেক আধুনিক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে যেটি মোটেই সম্ভব নয়।

সাম্প্রতিক এক প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ফিলাডেলফিয়ার লেনার্ড নাকামুরা জ্বালানিসাশ্রয়ী ইমারত, গাড়িতে সংযুক্ত লেন কিপিং অ্যাসিস্ট সিস্টেম (এলকেএএস) ও পার্কিং সেন্সর এবং জিপিএস নেভিগেশনসহ কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছেন। স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রের উদ্ভাবনগুলোও বিবেচনাযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাকুলার অবক্ষয়ের চিকিৎসায় ক্যান্সারের ওষুধ আভাস্তিনের লুসেন্টিস ব্যবহারের চেয়ে কম ব্যয়বহুল। এসব ওষুধ মৌলিকভাবে ওই উদ্দেশ্যেই অনুমোদন করা হয়েছিল।   

তত্ত্বগতভাবে উৎপাদনশীলতার ওপর এসব উদ্ভাবনের মধ্যে কিছুর প্রভাব মান-সমন্বিত দাম নির্ধারণের (কোয়ালিটি-অ্যাডজাস্টেড প্রাইসিং) মাধ্যমে পরিমাপ করা যাবে। পার্কিং সহজতর করা এবং সড়ক নিরাপত্তার উন্নয়ন ঘটানো সেন্সরযুক্ত গাড়িগুলোকে ছাড় দেয়া যেতে পারে। এটি গাড়ি শিল্পে উচ্চতরবাস্তব আউটপুট তৈরিতে সহায়ক হবে বৈকি।

তবে বাস্তবে বিরাজমান প্রযুক্তিগুলোর সর্বব্যাপক প্রবণতার কারণে এ ধরনের সমন্বয় তাত্পর্যপূর্ণ পরিসংখ্যানিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। জিপিএস নেভিগেশনের বিষয়টি বিবেচনা করুন। ওয়েজ বা গুগল ম্যাপের মতো অ্যাপগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে কীভাবে মান সমন্বয় করা হবে?

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন