১৯৬২’র ছাত্র
আন্দোলন, ১৯৬৯-এর
গণ-আন্দোলন
থেকে শুরু
করে যত
ধরনের আন্দোলনে
বাংলাদেশের জনগণ
যোগ দিয়েছে,
তাদের ক্ষোভ
ও বিদ্রোহ
ছড়ানোর কাজে
অসাধারণ ভূমিকা
রেখেছে ‘চিকা’।
বাংলাদেশে
১৯৬০-এর
দশকে শব্দটি
জনপ্রিয় হয়েছে।
চিকা মানে
যে কেবল
ইঁদুর-সদৃশ
বুকে হাঁটা
একটি প্রাণী
নয়, তা
সচেতন মানুষের
কাছে স্পষ্ট
হয়েছে। ‘চিকা’
সম্পূর্ণভাবে আমাদের
নিজস্ব। বাংলা
একাডেমিকে ধন্যবাদ,
‘চিকা’ তাদের
অভিধানে অন্তর্ভুক্ত
হয়েছে। একাডেমির
বাংলা-ইংরেজি
অভিধানে যথার্থই
লেখা হয়েছে
চিকা মানে
‘ওয়াল রাইটিং’।
বাংলাদেশে
চিকাহীন দেয়াল
দুর্লভ। কিন্তু
আমাদের এ
চিকা-সংস্কৃতি
চীনারা পেল
কেমন করে—এ
প্রশ্ন উঠতেই
পারে।
চীনের
মহাপ্রাচীরেও চিকা—ওয়াল
রাইটিং দেখা
যায়। যেহেতু
তাদের ভাষা
আমার বোধগম্য
নয়, তাই
যেমন আছে,
তেমনই কিছু
ছবি ছাপা
হচ্ছে, ভেতরের
কথা অনুবাদ
করা গেল
না।
একসময়
চেয়ারম্যান মাও’র
গুণকীর্তন উত্কীর্ণ
হতো, তারপর
তার মুণ্ডুপাতও
হয়েছে, চার
কুচক্রীর দলের
একজন হিসেবে
তার স্ত্রীরও
ফাঁসি চাওয়া
হয়েছে বেইজিংয়ের
দেয়ালে।
চীনের
মহাপ্রাচীরের কেবল
এক-তৃতীয়াংশই
আমরা একালে
পাচ্ছি, এর
মধ্যে ভাঙাচোরা
অংশ তো
রয়েছেই। দেয়াল
লেখকদের অত্যাচারে
এমনিতে দেয়াল
বিপর্যস্ত, শেষ
পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ
দেয়ালের একটি
নির্দিষ্ট অংশ
চিকা মারার
জন্য নির্ধারিত
করে দেয়ার
সিদ্ধান্ত নেয়,
এর বাইরে
মারতে গেলেই
ধরা হবে
এবং দেয়াল
প্রতিরক্ষার বিধান
অমান্য করার
দায়ে বিচার
করা হবে।
(চিকা
মারার শানে
নজুল যাদের
অজানা, তাদের
জ্ঞাতার্থে: আইয়ুব
শাসনামলে সরকারবিরোধী
প্রচারণার কৌশল
হিসেবে এবং
একই সঙ্গে
স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার
দাবি জানিয়ে
দেয়ালে দেয়ালে
লেখা হতো—আইয়ুব-মোনায়েম দুই ভাই/এক দড়িতে ফাঁসি
চাই,
২২ পরিবারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও, তোমার আমার
ঠিকানা পদ্মা
মেঘনা যমুনা।
দেয়ালের
লিখন চলত
রাতের আঁধারে।
হাতে টর্চলাইট,
ব্রাশ এবং
কালো কিংবা
সাদা রঙের
বালতি। পুলিশের
রুটিন ধাওয়া
তো ছিলই।
খসখস
পায়ের শব্দ
শুনে পুলিশ
যখন জিজ্ঞেস
করল, কে
ওখানে, কে
ওখানে?
জবাব
এল, কেউ
না চিকা
মারি। এই
চিকা ইঁদুর-চিকা
গোত্রের চিকা।