চবিতে মানোন্নয়নকৃত শিক্ষার্থীদের দিনভর অবস্থান

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, চবি

উচ্চ মাধ্যমিকে মানোন্নয়ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগদানের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মত অবস্থান নিয়েছেন। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। দিনভর শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার কোর কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষা জন্য করলেও কয়েক দফা বৈঠকের পরও কোন সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। 

‘ভর্তির যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে’- কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত জানালে অসন্তোষ জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রশাসনের অস্পষ্ট সিদ্ধান্ত শুনে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, উচ্চ মাধ্যমিকে মানোন্নয়ন পরীক্ষার পর চবির ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে কিনা- এ বিষয়ে গতকাল বুধবার ভর্তি পরীক্ষার কোর কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। এজন্য বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ৩টা থেকে থেকে চলা সভা শেষে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত জানাতে আসেন ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এসএম আকবর হোছাইন। 

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কয়েক দিনের মধ্যে সাবজেক্ট চয়েসের বিষয়টি ওপেন করে দেয়া হবে। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভর্তি কার্যক্রম চলবে।’ 

এসময় শিক্ষার্থীদের এ অংশটি ভর্তি হতে পারবে কিনা- প্রশ্ন তুললে আকবর হোছাইন বলেন, ‘এটুকুই আজকের সভার সিদ্ধান্ত। এর বাইরে আর কিছু বলতে পারবো না।’ 

এসময় ফেনী থেকে আসা সানজিদা নামে এক শিক্ষার্থীর মা নাসিমা বেগম অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং সুষ্পষ্ট সিদ্ধান্ত ছাড়া থেকে কোথাও যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। পরে উপাচার্য কার্যালয়ে গিয়ে তিনি আবারও কমিটির বৈঠকে মিলিত হোন। এর প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠকের পর একই সিদ্ধান্ত জানাতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ দানের নিশ্চয়তা না পেয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন আন্দোলনরতরা।

জানতে চাইলে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এসএম আকবর হোছাইন সাংবাদিকদেরও বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে’ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তি নেয়া হবে। আর কোন মন্তব্য করতে পারবেন না বলেও তিনি জানিয়েছেন। 

তবে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।  

এর আগে গত সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শহীন মিনার চত্বরে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম ও মানোন্নয়নের পর প্রাপ্ত দুটি মার্কশিট, ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রসহ লিখিত আবেদন দিতে বলা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা বিকাল ৪টার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করেন। পরদিন মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে শহীন মিনার চত্বরে অবস্থান নিয়ে লিখিত আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগপত্র সংগ্রহ করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে দুপুরে ৩২৬টি আবেদন প্রক্টর অফিসে জমা দিয়েছেন প্রতিনিধি দল। গতকাল সকালেও আরো ৩০-৪০টি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিকে মানোন্নয়ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। কিন্তু পরে তারা জানতে পারেন, ২০১৮ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চবিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করার পরও যারা ২০১৯ সালে আবার মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছেন, তারা ভর্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এরপর মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগ করেন, মানোন্নয়নকৃত শিক্ষার্থীদের আবেদন যোগ্যতা নিয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে অস্পষ্টতা ছিল। এছাড়াও প্রশ্ন ওঠে- অযোগ্য হলে শিক্ষার্থীদের আবেদন কেন গ্রহণ করা হলো। তবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট ছিল জানিয়ে আবেদনকারীদের অসচেতনতাকে দায়ী করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন