বড় হচ্ছে দেশের ওষুধ শিল্প

প্রতিবন্ধকতা দূর করে মানসম্পন্ন বিকাশে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হোক

বাংলাদেশে যে কয়েকটি শিল্পকে সম্ভাবনাময় হিসেবে ধরা হয়, তার মধ্যে ওষুধ শিল্প অন্যতম। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশী বাজারে সুনামের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ওষুধ। স্বল্প মূলধন ওষুধের গুণগত মান বজায় রাখায় বিদেশী বাজারে বাড়ছে দেশী ওষুধের চাহিদা। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের অগ্রযাত্রার মূল কারণ আমাদের ওষুধ নীতির যথার্থ বাস্তবায়ন। ১৯৮২ সালে দেশে যে ওষুধ নীতি করা হয়, তার সুফল এখনো পাওয়া যাচ্ছে, যার কারণে এখানকার ওষুধ শিল্প কেবল সামনেই অগ্রসর হয়নি; বরং দেশের মানুষকে কম দামে ওষুধ কিনে সেবনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তা না হলে দেশের অনেক গরিব মানুষকে ওষুধের অভাবে মৃত্যুবরণ করতে হতো অকালে। আমাদের ওষুধ নীতি দিনে দিনে অনেক সংশোধিত পরিমার্জিত হচ্ছে। যে কারণে আমাদের ওষুধ শিল্প আগামীতে আরো ভালো অবস্থানে পৌঁছে যাবে সন্দেহ নেই। এখন যেভাবে ওষুধ বিক্রি হয়, তার ধরনও বদলে যাবে সময়ের পালাবদলে। বাংলাদেশে যত পণ্য তৈরি হয়, তার মধ্যে ওষুধের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে শতভাগ মান নিশ্চিত করা হয়। নতুন ওষুধ নীতিমালায় অনেক কিছুই সংযোজন হচ্ছে। যে কারণে আরো বেগবান হবে আমাদের ওষুধ শিল্প, আরো এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। এখন আমাদের এখানে ভালো উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী গ্রুপ ওষুধ শিল্পে আসছে। আমাদের ওষুধ শিল্পে অনেক দক্ষ, অভিজ্ঞ মেধাবী লোকজন প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে। আগামীতে তাদের দক্ষতা নিরলস পরিশ্রমের কারণে আমাদের ওষুধ শিল্প আরো উন্নত হবে।

সম্ভাবনাময় ওষুধ শিল্পে বড় বাধা কাঁচামাল আমদানি। উৎপাদনের বড় একটা অংশ ব্যয় হয় উচ্চমূল্যের কাঁচামালের পেছনে। দেশে ওষুধ প্রস্তুতের কাঁচামাল উৎপাদন বাড়াতে পারলে উৎপাদন ব্যয়ও কমবে, ওষুধের দামও মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে দেশের অধিকাংশ ওষুধের কাঁচামালের বাজার হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো। আজকাল দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন করছে। মুন্সীগঞ্জের এপিআই ওষুধ শিল্প পার্ক পুরোদমে চালু হলে কাঁচামাল উৎপাদন বাড়বে। ফলে আমদানি খরচ ৭০ শতাংশ কমে আসবে। বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ছাড়ের সুযোগ বাংলাদেশের জন্য বড় আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। দেশের অনেক কোম্পানিই এখন আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করছে। নতুন নতুন কোম্পানির ওষুধ প্রস্তুতকারী হিসেবে আসার পথও তৈরি হয়েছে। শ্রম, উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা এবং সরকারি সহায়তায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রফতানি খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। তবে বিশ্ববাজারে পোশাকের দরপতন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উচ্চহারে শুল্কারোপের ফলে খাতটি ক্রমেই বাধার মুখে পড়ছে। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এখনই ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগানো উচিত।

বর্তমানে অধিকাংশ ওষুধের উচ্চমূল্য ভোক্তাসাধারণের দুশ্চিন্তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি নকল, ভেজাল মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের দৌরাত্ম্যও আছে; যা শুধু গ্রাম-গঞ্জে নয়, রাজধানীতেও মেলে হামেশাই। মাঝে মধ্যেই সেসব ওষুধ জব্দ করাসহ জরিমানার খবরও মেলে। বেশ কয়েক বছর আগে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য এপিআই বা অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্স তৈরির নিমিত্তে শিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ঝুলে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। যাহোক, টেকসই এপিআই খাতের জরুরি বিকাশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগসহ এক্ষেত্রে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, শুল্কমুক্ত সুবিধা, অবকাঠামো নির্মাণসহ ওষুধ নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন