প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে উদ্ভাবনী স্টার্টআপগুলোকে সক্ষম আর গোটা শিল্পকে ভেঙেচুরে নতুন শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একসময় একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু তার মধ্য থেকে নতুন কিছু স্টার্টআপ রীতিমতো অতিকায় দানবে পরিণত হয়ে তারা বিশাল এ শক্তিকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে, যা কিনা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়টি থেকে অনেক দূরে; বরং বড় প্রযুক্তি কোম্পানিই মূলত এর মালিক ও অর্থনীতিকে গণতান্ত্রিক করে তোলার পরিবর্তে ইন্টারনেট বিশ্বের বৈষম্য সমস্যাটি আরো বাড়িয়ে তুলছে।
বৃহৎ প্রযুক্তির উত্থান কিছুসংখ্যক ব্যক্তিকে বিশাল পরিমাণ ধন-সম্পদের মালিকে পরিণত করেছে। ধনীদের মধ্যে যেমন রয়েছেন অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস। গত সপ্তাহে একদিনে তিনি ৭ বিলিয়ন ডলার লোকসান করেছেন; যা কিনা বুরুন্ডি, সিয়েরা লিওনসহ কয়েকটি দেশের মোট সম্পদের সমান। এর মধ্যে বুরুন্ডি আর সিয়েরা লিওনের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলার করে। এ লোকসানের ফলে বেজোস গুরুতর যে ঝুঁকিটির মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন তা হলো, তিনি সম্ভবত বিশ্বের সম্পদশালী ব্যক্তির তালিকায় বিল গেটসের কাছে শীর্ষস্থানটি খুইয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে আসতে পারেন।
এদিকে প্রায় ৭৩৬ মিলিয়ন মানুষ এখনো অতিদারিদ্র্যের (যাদের দৈনিক গড় আয় ১ দশমিক ৯০ ডলারের নিচে) মধ্যে জীবনযাপন করছে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যানমতে, বিলিয়নের বেশি মানুষ রয়েছে, যাদের দৈনিক গড় আয় ২ দশমিক ৫০ ডলারের নিচে। বিশ্বব্যাপী অনেক কর্মী রয়েছেন এ তালিকায়, অ্যামাজন থেকে শুরু করে গ্রাহক পেতে উবারের মতো প্লাটফর্মে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন এমন কর্মীরাও রয়েছেন, যারা অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকারক কর্মপরিবেশে কাজের পাশাপাশি নির্দিষ্ট পরিমাণ মজুরি পেয়ে থাকেন। যেহেতু আয়ের ওপর শ্রমিকের ভাগ হ্রাসের মাধ্যমে মূলধনের ভাগ বৃদ্ধি পায়— সেহেতু প্রবণতাটি বিশ্বজুড়ে বিত্তবানদের সুবিধা দিয়ে চলেছে।
বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে এ শক্তি জোগানোর মাধ্যমে প্রতিযোগিতার কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে, তাই ওই প্রবণতা থামাতে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়বে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন ২০২০ নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু হয়ে আসছে বড় বড় প্রযুক্তিকে আয়ত্তে আনার বিষয়টি। সুনির্দিষ্টভাবে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেন আমার দৃষ্টিতে দুজন শক্তিশালী প্রার্থী, যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, তারা বৃহত্তর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছেন।