প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘকে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা। সোমবার জাতিসংঘকে আনুষ্ঠানিকভাবে জলবায়ু চুক্তির বিপেক্ষে যুক্তরাষ্টের অবস্থান জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। খবর বিবিসি
ট্র্যাম্প প্রশাসন বলেছে, একবছরের জন্য তারা চুক্তির বাইরে থাকবেন। এই মেয়াদ শেষ তারিখ ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরের দিন।
শিল্পোন্নত বিশ্বে কার্বন নিসঃরণের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে ২০১৫ সালে প্যারিসে এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ১৮৮টি দেশ। চুক্তিতে আরও কয়েকটি বিষয়ের সঙ্গে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এতে স্বাক্ষর করেছিলেন।
তবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ‘ভাওতাবাজি’ আখ্যা দিয়ে আসছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচিত হয়ে ২০১৭ সালের ১ জুন এই চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন তিনি।
গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার বিস্তারিত পরিকল্পনা ঘোষণা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ওই সময় তিনি দাবি করেন, এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ‘অন্যায্য অর্থনৈতিক বোঝা’ চাপিয়েছে।
২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যদেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে আইনে পরিণত হয় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি। জাতিসংঘের বেধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী, এই সময় থেকে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে কোনও দেশ চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করতে পারবে না। এরপরে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে যেতে হলেও এক বছর অপেক্ষা কাল (ওয়েটিং পিরিয়ড) পার করতে হবে। সোমবার ওই সময়সীমা পার হওয়ার প্রথম দিনেই প্রথম দেশ হিসেবে চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র।
কী আছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে
প্যারিসে যে বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তিটি হয়েছে তা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশ্বের দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করছে। ২০০টির মতো দেশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনতে যে ঐকমত্য পোষণ করেছে তাকে অনেক পর্যবেক্ষকই ‘ঐতিহাসিক অর্জন’ বলে বর্ণনা করছেন।
১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রটোকলে হাতে গোনা কয়েকটি দেশকে ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ ঠেকানোর লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। কিন্তু সেই প্রটোকল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাকীরাও লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। অবশ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতে আসন্ন বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে প্যারিস চুক্তিকে অবশ্যই কার্যকর করতে হবে।
চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম করা। গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা। প্রতি ৫ বছর অন্তর ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ রোধে প্রত্যেকটি দেশের ভূমিকা পর্যালোচনা করা। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে গরিব দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর ‘জলবায়ু তহবিল’ দিয়ে সাহায্য করা।
অর্থ সঙ্কট কি চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা হবে?
প্যারিসের দর কষাকষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে অর্থের যোগান। উন্নয়নশীল দেশগুলো দাবি তুলেছে, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বাদ দিয়ে সরাসরি নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের দিকে যেতে তাদের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন। আগামী ২০২০ সাল নাগাদ এই খাতে বছরে ১শ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে যাতে সন্তুষ্ট নয় অনেক দেশই। চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে ২০২০ সালের পরেও বছরে ১শ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা।