বেদখল হয়ে যাচ্ছে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ

সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ নিক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রত্যেক জাতির জন্যই অমূল্য সম্পদ। সম্পদ আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। অথচ আমাদের দেশের মূল্যবান নিদর্শন সংরক্ষণের যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এখনো। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের সাক্ষ্য মহামূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, প্রাচীন স্থাপত্য কাঠামো প্রত্ননিদর্শন। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে দুই হাজারের বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চিহ্নিত করা হলেও ৫০৯টি স্থাপনা সংরক্ষিত নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি নিদর্শন সংরক্ষণের আওতায় না আসায় নষ্ট হচ্ছে। অথচ এগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার কাজটি করে আমাদের জাদুঘরগুলো। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরও গঠন করা হয়েছে প্রত্নসম্পদ রক্ষায়। কিন্তু তারা এসব সম্পদ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে প্রত্নসম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে তাদের অবহেলা উদাসীনতায়। কোথাও কোথাও আবার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের গায়ে কাঠের সিঁড়ি পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছে। এতে বিকৃত হয়ে গেছে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন গবেষণার জন্য যে জাদুঘর আমাদের রয়েছে, সেগুলো এখনো উনিশ শতকে পড়ে আছে। এগুলোকে প্রকৃত অর্থে জাদুঘর না বলে উন্মুক্ত গুদাম বলা যায়। কারণ এগুলোয় কেবল সারিবদ্ধভাবে নিদর্শনগুলো প্রদর্শনের মাঝেই সীমাবদ্ধ রেখেছে তাদের কাজ। কিন্তু জাদুঘরকে আরো বেশি জনগণ সম্পৃক্ত করতে হবে। নতুন নতুন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনকেন্দ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে। দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সুরক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জাদুঘরগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাহলে নতুন প্রজন্ম দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। ভালোবাসতে জানবে দেশের মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে এবং দেশের মানুষকে।

দেশের সাংস্কৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকারের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ জরুরি বলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন। আইনের দ্বারা ঐতিহাসিক ইমারত ধ্বংস বন্ধ করতে হবে, পুরাকীর্তির গুপ্তভাণ্ডার প্রত্নপীঠগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করতে হবে, পুরাকীর্তির পাচার রোধ করতে হবে। একই সঙ্গেরিটার্ন অ্যান্ড রেস্টিটিউশন অব কালচারাল প্রপার্টিআইনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া পুরাকীর্তিগুলো দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে পুরাকীর্তি বিষয়ে তিনটি আইন বিদ্যমান: ‘ট্রেজারস ট্রুভ অ্যাক্ট ১৮৭৮’, ‘অ্যানশিয়েন্ট মনুমেন্টস প্রিজারভেশন অ্যাক্ট ১৯০৪অ্যান্টিকুইটিজ অ্যাক্ট ১৯৪৭ তিনটি আইনই ব্রিটিশ শাসনামলে প্রণীত। আইনগুলো পাকিস্তান আমলে হুবহু আত্তীকৃত হয়েছিল। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর একই অবস্থায় আইনগুলো কার্যকর করা হয়েছে। ট্রেজারস ট্রুভ আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রাপ্ত সময় থেকে ১০০ বছরের পুরনো (১০ টাকা মূল্যমানের হলেও) মাটির নিচে থাকা যেকোনো বস্তু পাওয়ামাত্র নিকটতম ট্রেজারিতে জমা করতে প্রাপক বাধ্য থাকবে। আইনটি ১৮৯১ ১৯০৭ সালে কিছু সংশোধন করা হয়। নানা কৌণিকে ব্যাখ্যা করে আইনটির সংস্কার খুবই প্রয়োজন।অ্যানশিয়েন্ট মনুমেন্টস প্রিজারভেশন অ্যাক্টপুরাকীর্তির পাচার রোধ এবং ঐতিহাসিক ইমারত রক্ষা, প্রত্নতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক শিল্পকলার নিদর্শনগুলো সংগ্রহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছিল। পুরাকীর্তি পাচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠিন শাস্তির বিধান রেখে আইনটির সংশোধনী আশু প্রয়োজন। অ্যান্টিকুইটিজ (এক্সপোর্ট কন্ট্রোল) অ্যাক্ট আইনবলে সরকারি অনুমোদনক্রমে বিদেশে পুরাকীর্তি রফতানি করা যায়। বিশাল ফাঁক রয়ে গেছে আইনেও। যে কেউ কৌশল অবলম্বন করে দেশের মহামূল্য ওই-জাতীয় সম্পদ সরকারের কাছ থেকে অনুমতি সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠাতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক প্রত্যয়নের বিধান আইনে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংস্কৃতিকে ব্যবহার করতে হলে প্রয়োজন একটি কমিশন

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন