স্মার্টফোনের মন্দা বাজারের মধ্যে হঠাৎ করেই প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে ট্যাবলেট কম্পিউটারের বাজার। ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) হিসাবে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ট্যাবলেটের বাজার প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৯ শতাংশ লক্ষ করা গেছে। অ্যাপলসহ শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর নতুন ডিভাইস উন্মোচনের কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে এ ইতিবাচক প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আইডিসির উপাত্ত অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সারা বিশ্বে ট্যাবলেট সরবরাহ হয়েছে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ইউনিট। বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে অ্যাপল। মার্কিন এ টেক জায়ান্টের আইপ্যাডের সরবরাহে তৃতীয় প্রান্তিকে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। বছরের শেষের দিকে নতুন আইপ্যাড উন্মোচন করায় সরবরাহ হঠাৎ করেই বেড়েছে। ফলে তৃতীয় প্রান্তিকে বাজার অংশীদারিত্বও বেড়ে ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। যেখানে ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে আইপ্যাডের বাজার অংশীদারিত্ব ছিল ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
অ্যাপলের সর্বসাম্প্রতিক আইপ্যাডে যুক্ত হয়েছে স্মার্ট কানেক্টর। আইপ্যাড মিনি বাদে বাকি ডিভাইসগুলোয় আলাদা কিবোর্ড যুক্ত করার অপশন রয়েছে। ক্রেতারা বিষয়টি ভালোই পছন্দ করেছে। পাশাপাশি এ ট্যাবলেট ডিভাইসের জন্য অ্যাপল আইপ্যাড ওএস নামে বিশেষায়িত অপারেটিং সিস্টেম এনেছে। এসব কারণেই মূলত ট্যাবলেট ডিভাইসের বাজারে অ্যাপল সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের তকমা পেয়েছে। তাছাড়া অ্যাপলের নতুন এ ট্যাবলেট ডিজাইনকে প্রচলিত পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি) ব্র্যান্ডগুলোর জন্যও হুমকি মনে করা হচ্ছে।
ট্যাবলেট বাজারে এবার চমক দেখিয়েছে ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। অ্যামাজনের সাশ্রয়ী মূল্যের ফায়ার ট্যাব লুফে নিয়েছে ক্রেতারা। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে স্যামসাংকে হটিয়ে ট্যাবলেটের বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে অ্যামাজন। বছরভিত্তিক সরবরাহ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ। গত প্রান্তিকে ফায়ার ৭ ট্যাব উন্মোচন এবং কোম্পানির বার্ষিক প্রাইম ডে সেল ট্যাবলেটের সরবরাহে এ প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। সর্বশেষ সংস্করণ ফায়ার ১০ এবং আসন্ন বড়দিনের উৎসব থাকায় ট্যাবলেটের বাজারে অ্যামাজন দ্বিতীয় অবস্থান আরো সুদৃঢ় করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
স্মার্টফোনের বাজারে কোরীয় প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাং বরাবর শীর্ষ স্থান ধরে রাখলেও ট্যাবলেটের বাজারে অ্যামাজনের কাছে অবস্থান হারিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে ব্র্যান্ডটির ৪৬ লাখ ট্যাবলেট বিশ্বব্যাপী সরবরাহ করা হয়েছে। অবশ্য স্যামসাংয়ের ‘ট্যাব এ’ এখনো সারা বিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয়। গত প্রান্তিকে মোট সরবরাহের অর্ধেকই ছিল এ মডেলের ট্যাবলেট। সেসঙ্গে নতুন উন্মোচিত ট্যাব এস মডেলের ভালো বেচাবিক্রি প্রিমিয়াম অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেটের বাজারে কোম্পানিটির মর্যাদার আসন ধরে রেখেছে।
চীন-মার্কিন বাণিজ্য বিরোধের বলি হুয়াওয়ের স্মার্টফোনের পাশাপাশি ট্যাবলেটের বাজারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকে চীনা কোম্পানিটির ট্যাবলেট সরবরাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৩৬ লাখ ইউনিটে ঠেকেছে। তাছাড়া এ সরবরাহের অধিকাংশই চীনের বাজারে।
চীনা আরেক কোম্পানি লেনোভো ল্যাপটপের পাশাপাশি ট্যাবলেটের বাজারেও ভালো করছে। সরবরাহের দিক থেকে কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থান শীর্ষ পাঁচে। তৃতীয় প্রান্তিকে লেনোভোর ট্যাবলেটের বাজার অংশীদারিত্ব ৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। জাপানসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বাজারে লেনোভোর ট্যাবলেটের চাহিদা রয়েছে।
