বৈশ্বিক আর্থিক পরিস্থিতি সামলানোর জন্য সুদহার কর্তনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। বলতে গেলে এখতিয়ারে থাকা প্রায় সব অস্ত্র প্রয়োগ করেছে তারা। এখন নীতিনির্ধারকরা দেখতে চান এতদিন তারা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা আগামী মাসগুলোয় শ্লথগতি রোধে কতটা কার্যকর হচ্ছে। খবর রয়টার্স।
ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে বিশ্ব বাণিজ্যে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা সামলাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল ও ইউরোজোন থেকে ফিলিপাইন সাম্প্রতিক মাসগুলোয় সুদহার কমিয়েছে।
শীর্ষ তিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্যাংক অব জাপান সুদহার আরো কমানোর জলদিতে নেই, বিশেষ করে যেখানে ইউরোপ ও জাপানে এখনই সুদহার ঋণাত্মক।
গত সপ্তাহে জুলাইয়ের পর তৃতীয়বার সুদহার কমিয়েছে ফেড। একই সঙ্গে ফেড কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তারা শিগগিরই আবার সুদহার কমানোর সম্ভাবনা দেখছেন না।
ইউরোপে কিছুটা ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, ইসিবি সেপ্টেম্বরে সুদহার কমিয়েছে এবং নিকট ভবিষতে আরো কমানোর সম্ভাবনা নেই। এর চেয়ে অঞ্চলটির নেতাদের নিজেদের প্রণোদনা প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য বেশি মনোযোগ দিচ্ছে তারা।
বিশ্বজুড়ে সম্প্রতি সুদহার কর্তনের হিড়িক পড়লেও নিজেদের সামলে রেখেছে ব্যাংক অব জাপান (বিওজে)। ব্যাংকটি যতদিন পারা যায়, ততদিন বর্তমান সুদহারে টিকে থাকতে চায়।
এদিকে উন্নয়নশীল বিশ্বে আগস্টে সুদহার কমানোর যে হিড়িক পড়েছিল, তা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। যদিও অক্টোবর নিয়ে টানা নয় মাস সুদহার কমিয়েছে উদীয়মান বাজারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।
বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নিজেদের নেয়া পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছুটা বিরতি নিতে যাচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা।
অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার জন্য মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত দিয়ে শুরু হওয়া বাণিজ্য বিবাদ পুরো বিশ্বের ক্ষতি করছে। তবে আশার বিষয় যে সম্প্রতি একটি চুক্তির প্রথম পর্যায় স্বাক্ষরিত হওয়ার জোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেকোনো সময় নিজের সিদ্ধান্ত বদল করতে পারেন। কেননা এমনটা আগেও দেখা গেছে এবং এবারো হতে পারে।
এর পরও ফ্রাংকফুর্ট ও টোকিওর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো গত দুই সপ্তাহে যে বার্তা দিয়েছে, তা ফেডের নতুন অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত কী হয়।
গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে ফেড চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল বলেন, আমরা মনে করছি আমাদের নীতি সঠিক পথেই রয়েছে। মার্কিন-চীন বাণিজ্য চুক্তির প্রথম দফা স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা ও চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের শঙ্কা কমে আসাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মার্কিন অর্থনীতিতে ঝুঁকি সৃষ্টিকারী কারণগুলোর অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সেপ্টেম্বরে সুদহার কমানোর পর ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ইউরোর বন্ড-ক্রয় প্রোগ্রাম আবার শুরু করেছে ইসিবি। তবে সুদহার কর্তন ও বন্ড কেনা নিয়ে অঞ্চলটিতে বিভক্তি দেখা গেছে। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্স বন্ড-ক্রয় প্রোগ্রাম ফের চালুর বিরোধিতা করেছে। গত শুক্রবার ইসিবির নতুন প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাকে এখন এসব ধনী দেশের প্রতিনিধি ও বিপদগ্রস্ত অঞ্চলের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তবে আইএমএফের এই সাবেক প্রধান বলছেন, সুবিধাজনক মুদ্রানীতি গ্রহণের যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকেও নজর রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার আগের সুদহারই বজায় রেখেছে বিওজে এবং আগামী দিনের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার কথা জানিয়েছে।