টি২০-তে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নয়বারের চেষ্টায় অবশেষে টি২০ ক্রিকেটে ভারতকে হারানোর স্বাদ পেল বাংলাদেশ। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে গতকাল স্বাগতিকদের ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। বোলারদের কৃতিত্বে স্বাগতিকদের ১৪৮ রানে আটকে দেয়ার পর ব্যাটিংয়ের কাণ্ডারি মুশফিকুর রহিমের ৪৩ বলে খেলা ৬০ রানের হার না মানা ইনিংসে ভর দিয়ে অবিশ্বাস্য এক জয় পায় বাংলাদেশ (১৫৪/৩)। এ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০-তে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে ভারত বিশ্বের অন্যতম সেরা। ফর্ম ও ইতিহাস সবই ছিল ভারতের পক্ষে। অন্যদিকে প্রায় সবকিছুই ছিল বাংলাদেশের প্রতিকূলে। দিল্লির বায়ুদূষণ কয়েক দিন ধরেই আলোচনায়। সঙ্গে যোগ হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক অস্থিরতা। সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবিতে ক্রিকেটারদের আন্দোলন এবং ভারত সফরে রওনা হওয়ার একদিন আগে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়ে সাকিব আল হাসানের ছিটকে যাওয়া। সব মিলিয়ে বেশ কোণঠাসা অবস্থায় ভারত সফরে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে দুঃসময়কে যেন এক হলকায় উড়িয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুর রহিমরা।

রান তাড়া করতে নেমে দলীয় ৮ রানে লিটন দাসকে হারানো বাদে বাকিটা সময় দারুণভাবে ম্যাচে ছিল বাংলাদেশ। অভিষিক্ত নাঈম শেখকে (২৮ বলে ২৬) নিয়ে ৪৬ রানের দারুণ জুটি গড়েন সৌম্য সরকার (৩৫ বলে ৩৯)। অবশ্য শেষ দিকে খানিকটা অনিশ্চয়তা নেমে আসে।

১৭তম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ খলিলকে স্টিয়ার করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান সৌম্য। ৩ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ৩৫ রান। বাংলাদেশের বহু সাফল্যের রূপকার মুশফিকুর ও মাহমুদউল্লাহ ছিলেন বলে আশা টিকে থাকে দলের। এ দুজনের সাহসী ব্যাটিংই অভাবনীয় এক জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে।

শেষ ২ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২২ রানের। ১৯তম ওভারেই ফল নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসেন মুশফিকুর। এ ওভারের শেষ ৪ বলে খলিলকে টানা চার বাউন্ডারি মেরে ভারতের সব আশা শেষ করে দেন তিনি। শেষ ৬ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে মাত্র ৪ রান! শিভাম দুবের প্রথম বলটি ডট। দ্বিতীয় বলে মাহমুদউল্লাহ ২ রান নিলে সমীকরণ দাঁড়ায়৪ বলে ২ রান। ওয়াইড থেকে এক রান এলে ম্যাচটাই। স্বস্তি নামে বাংলাদেশ শিবিরে। তৃতীয় বলটিকে ডিপ মিডউইকেট অঞ্চল দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে বীরদর্পে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক (৭ বলে ১৫)। 

এর আগে শিখর ধাওয়ান (৪২ বলে ৪১), ঋষভ পান্ত (২৬ বলে ২৭) ও শ্রেয়াস আইয়ারের (১৩ বলে ২২) ব্যাটে ভর দিয়ে ৬ উইকেটে ১৪৮ রান তোলে ভারত। রিস্ট স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও পেসার শফিউল ইসলাম নেন ২টি করে উইকেট। তবে ১৪৯ রানের টার্গেট দিয়ে বাংলাদেশকে আটকানো যায়নি।

এ জয়ে দুঃসময়ে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেয়া মাহমুদউল্লাহর চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হতে পারেন না। গতকাল ম্যাচ শেষে তার অনুভূতি ঝরল এভাবে, ‘সবকিছু নির্ভর করছিল আমরা কেমন শুরু করি তার ওপর, তবে আমাদের মূল কাজটা বোলাররাই করে দিয়েছে। প্রত্যেকেই অবদান রেখেছে। ছেলেরা যেভাবে পারফর্ম করেছে, তাতে অধিনায়কত্বের কাজটি সহজ হয়ে যায়। বিশেষভাবে কৃতিত্ব দিতে হবে মুশিকে (মুশফিকুর) সে সৌম্যকে নিয়ে দারুণ করেছে। নাঈমও অভিষেকে দারুণ ব্যাট করেছে, এমন সূচনাই আমাদের প্রয়োজন ছিল।

ওয়ানডেতে ৩৬ লড়াইয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় পাঁচটি। তবে নয় টেস্ট ও আট টি২০-তে জয় ছিল অধরা। অবশেষে টি২০-তে হারানো গেল পরাশক্তিদের। এবার পাঁচদিনের ক্রিকেটে জয়-খরা ঘোচানোর অপেক্ষা।

আগামী বৃহস্পতিবার রাজকোটে সিরিজের দ্বিতীয় টি২০।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন