দেশে গণতান্ত্রিক ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সেই চিন্তা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং শহীদ হয়েছেন, তাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। এ দেশে যেন আবারো খুনিদের রাজত্ব না হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে। গণতান্ত্রিক ধারা যেন অব্যাহত থাকে—বাংলাদেশের মানুষকে সেভাবেই চিন্তা করতে হবে। খবর বাসস।
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর
খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায়
এসব কথা বলেন তিনি।
জাতির পিতা এবং জাতীয় চার নেতা
হত্যাকাণ্ডের জন্য স্বাধীনতাবিরোধীদের অভিযুক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫
আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল, তখন অনেকে ভেবেছে একটি পরিবারকে
নিঃশেষ করার জন্যই এ হত্যাকাণ্ড। কিন্তু ৩ নভেম্বর যখন জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা
করা হলো তখন বাংলার মানুষ পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারল এটা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং
স্বাধীনতাবিরোধীদের কাজ। এর মধ্য দিয়ে তারা একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল।
তিন বলেন, ‘খন্দকার
মোশতাকের নির্দেশে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্ত্র
নিয়ে ঢোকা যায় না। কিন্তু তারা অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল। গণভবন থেকে সেই নির্দেশ দেয়া
হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যেভাবে ঢুকতে চায়,
সেভাবেই যেন ঢুকতে দেয়া হয়।’
জিয়াউর রহমান এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বলেই মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েই জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান বানাল। কাজেই মোশতাকের পতনের সঙ্গে সঙ্গে জিয়ার হাতে সব ক্ষমতা চলে এল। এরপর তিনি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করলেন, খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে দেশ শাসনের নামে দুঃশাসন চালিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধী
এবং খুনিদের এ দেশে বিচার হয়েছে,
সাজা হয়েছে। এদের যারা দোসর বা ষড়যন্ত্রকারী, হয়তো
আজকে আমরা তাদের বিচার করে যেতে পারলাম না,
কিন্তু আগামীতে কোনো না কোনো দিন, এ
ষড়যন্ত্রকারীরাও এক সময় ধরা পড়বে। তাদের এ রহস্য উদঘাটন অবশ্যই হবে। কারণ ইতিহাস
কখনো মুছে ফেলা যায় না।
তিনি বলেন, কেউ
না কেউ এ বিচারটা করবে, এটা হবে, সেদিন আসবেই। কারণ বঙ্গবন্ধুর নাম যখন এ দেশ থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা
করেছিল ঘাতক দল, তখন তারা ভেবেছিল কোনোদিন আর এ নাম ফিরে আসবে না। কিন্তু তা হয়নি। ২১
বছর পর আবার ফিরে এসেছে। জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা বার বার ক্ষমতায় এসেছি বলেই
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তাদের ফাঁসির রায় আমরা কার্যকর করতে পেরেছি। জাতির পিতার
হত্যাকাণ্ডের বিচার করে তার রায়ও কার্যকর করতে পেরেছি।
৩ নভেম্বরের জেলহত্যার বিচার হয়েছে
এবং এখনো যে কয়টা খুনি এখানে-সেখানে পালিয়ে আছে,
তাদেরও খোঁজখবর করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দিইনি। অর্থনৈতিকভাবে দেশের উন্নতি করা, দেশের
অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্যের হাত থেকে এ দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে
চেয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে
আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আজকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের একটা বিস্ময়। সেই সম্মান এবং
মর্যাদাটা বাংলাদেশ আজকে পেয়েছে। এ সম্মান ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ায় তার দৃঢ় প্রত্যয়
ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এ বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা একদিন
গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।
চলমান সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি ও
মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসের
বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে,
মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান সেটা
অব্যাহত থাকবে।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা
সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে
প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল
আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল
মতিন খসরু এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।