সিলেট নগরীর পাঠানটুলায়
সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সড়ক বিভাজকের অর্ধশত ফলদ ও ঔষধি গাছ কেটে ফেলা হয় গত ২৮
অক্টোবর। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নগরীর শাহি ঈদগাহ এলাকায় অন্তত ২৬টি
গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে,
ঈদগাহের পশ্চিমাংশে ড্রেন নির্মাণের জন্য কাটা
হয়েছে সেগুন, মেহগনি, কড়ই ও আমসহ কয়েক প্রজাতির গাছ।
ঈদগাহে গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত
শ্রমিকরা জানান, গত শুক্রবার থেকে তারা ঈদগাহ কমিটির নির্দেশে গাছগুলো কাটছেন। সেগুন ও
মেহগনিসহ বেশ কয়েকটি গাছ কেটে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। গাছগুলোর বয়স ১২-১৪ বছর।
৯০ হাজার টাকায় এসব গাছ কিনেছেন রেজাউল করিম রাজু নামে এক ঠিকাদার।
এদিকে গতকাল দুপুরের দিকে ঈদগাহের
উত্তর-পশ্চিমাংশে একটি পিকআপ ভ্যানে করে কাটা গাছগুলো নেয়ার সময় বাধা দেয়
এলাকাবাসী। তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে গাছগুলো পিকআপ থেকে নামিয়ে রেখে
চলে যান চালক। তবে এ সময় ঈদগাহ কমিটির কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পূর্ব শাহি ঈদগাহের
বাসিন্দা রাজন আহমদ বলেন, গাছগুলো ঐতিহ্যবাহী এ ঈদগাহের শোভাবর্ধন করে। এগুলো কেটে ড্রেন
নির্মাণের কোনো মানে নেই। আমরাও চাই শাহি ঈদগাহের উন্নয়ন হোক। কিন্তু কোনোভাবেই
যেন পরিবেশের ক্ষতি না নয়। এর আগেও একাধিকবার এখানকার গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে
বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সিলেট নগর সবুজায়ন কমিটির সদস্য
আশরাফুল কবির বলেন, নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে গাছ কাটার প্রয়োজন পড়লে সেটা নগর সবুজায়ন
কমিটিকে অবগত করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না। কেউ জানেই না
কেন ড্রেন নির্মাণের জন্য নির্বিচারে গাছগুলো কাটা হলো।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিলেট
শাহি ঈদগাহের পশ্চিমাংশের ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। পাশেই সারিবদ্ধভাবে কাটা গাছ
ফেলা রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে গাছগুলোর ক্রেতা রেজাউল করিম রাজু বলেন, এলাকার
কয়েকজন ব্যক্তি তার কাছে এসব গাছ বিক্রি করেছেন। তবে তিনি ২৬টি গাছ কাটার কথা অস্বীকার
করেন। তিনি মোট আটটি গাছ কিনেছেন বলে জানান। এছাড়া গাছ কাটার আগে কারো অনুমতি নেয়া
হয়েছে কিনা, তা-ও তিনি জানেন না।
তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ১৭
নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ বলেন,
ড্রেন নির্মাণ ও রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য শাহি
ঈদগাহের পশ্চিম পাশের কয়েকটি গাছ কাটার প্রয়োজন হয়। এর পরই সিটি করপোরেশন থেকে
ঈদগাহ কমিটিকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চিঠি দেয়া হয়।
এদিকে এ গাছ কাটার বিষয়ে কিছুই জানেন
না বলে মন্তব্য করেছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা
শুনেছি ২৬টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো আমাদের অবগত করা হয়নি। তবে
তার মতে, উন্নয়নকাজের জন্য প্রয়োজনে এভাবে গাছ কাটা যায়। তার পরও তিনি খোঁজ
নেবেন।
এদিকে সিলেট শাহি ঈদগাহের মোতাওয়াল্লি
জহির বখত দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত
২৮ অক্টোবর সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাঠানটুলার সড়ক বিভাজকে ফলদ ও ঔষধি মিলিয়ে
মোট ৪৮টি গাছ কাটে সিসিক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ২২টি ছিল তালগাছ। এ নিয়ে গত
বৃহস্পতিবার বণিক বার্তায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরিবেশকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা
দেয়। তাদের প্রতিবাদের মুখে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটার
ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে গাছ রক্ষার ব্যাপারে আরো সচেষ্ট থাকবেন বলেও
জানান তিনি।