হিমাগারেই নষ্ট ১৫ শতাংশ আলু ক্ষতিগ্রস্ত ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও

হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে বিপাকে পড়ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক। সংরক্ষিত আলুর অন্তত ১৫ শতাংশই হিমাগারে নষ্ট হওয়ায় মুনাফার বদলে লোকসান গুনছেন তারা। কৃষকদের অভিযোগ, যথাযথ সংরক্ষণ পদ্ধতির অভাব তো রয়েছেই, হিমাগার কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণও করে না। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আলু পচে ও অঙ্কুরোদ্গম হয়ে বিক্রির অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার রয়েছে ১৭টি। আর এসব হিমাগারের প্রতিটির ধারণক্ষমতা ১২-২০ হাজার টন। কৃষকরা মৌসুমের শুরু থেকে উৎপাদিত আলু হিমাগারগুলোয় সংরক্ষণ করেন। প্রতি বস্তায় তারা আলু রাখেন ৮৪ কেজি করে। জুলাইয়ের দিকে সংরক্ষণের পর এসব আলু বিক্রির জন্য হিমাগার থেকে উত্তোলন করা হয় নভেম্বরের মধ্যেই। এবার হিমাগার থেকে আলু বের করে দেখা গেছে, অধিকাংশ বস্তার আলুতে পচন ধরার পাশাপাশি অঙ্কুর গজিয়েছে। এভাবে অন্তত দুটি হিমাগারে রাখা প্রতি বস্তায় আলু নষ্ট হয়েছে ২০-২৫ কেজি। এছাড়া বাকি হিমাগারগুলোয় প্রতি বস্তায় আলু নষ্ট হয়েছে অন্তত ১০-১৫ কেজি পর্যন্ত।

কৃষকরা জানিয়েছেন, আলু সংরক্ষণ করে ক্ষতির শিকার হলেও তার দায় নেয় না হিমাগার কর্তৃপক্ষ। ফলে গজিয়ে যাওয়া আলু তারা নামমাত্র দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা হিমাগার কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলেও তাতে কোনো কাজ হয় না। উল্টো আলু নষ্ট হওয়ার জন্য তাদের বিদ্যুৎ বিভ্রাটসহ নানা অজুহাত দেখানো হচ্ছে।

সদর উপজেলার কৃষক বেলাল হোসেন জানান, তিনিসহ তিন কৃষক উপজেলার এসবি অ্যাগ্রো হিমাগারে ৩০০ বস্তা আলু সংরক্ষণ করেন। কিন্তু বিক্রির জন্য হিমাগার থেকে আলু বের করে দেখেন, ৮৪ কেজির প্রতি বস্তায় গজিয়ে ও পচে আলু নষ্ট হয়েছে ২০-২৫ কেজি। এ অবস্থায় হিমাগার মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা বিদ্যুতের সমস্যার কথা জানান।

পরে বিষয়টি লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। অন্যদিকে সদরের আকচা ইউনিয়নের মোকলেসুর রহমান জানান, তিনি গত মৌসুমের আগস্টে ইউনিয়নের আমানত হিমাগারে ২২০ বস্তা আলু সংরক্ষণ করেন। কিন্তু বের করার সময় দেখতে পান, প্রতি বস্তায় আলু নষ্ট হয়েছে ১০-১৫ কেজি। তিনিও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন। কিন্তু হিমাগার কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দেয়া তো দূরের কথা, আলু নষ্ট হওয়ার দায়ও অস্বীকার করে।

এ বিষয়ে এসবি অ্যাগ্রো হিমাগারের হিসাবরক্ষক শান্তনু মজুমদার আলু গজিয়ে ও পচে নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মূলত বিদ্যুতের সমস্যার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই।

হাওলাদার হিমাগার লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক গোলাম সারোয়ার রবিন বলেন, আলু নষ্ট হওয়ার পেছনে কৃষকদেরও দায় আছে। তারা মানহীন অথবা ময়দার বস্তায় আলু সংরক্ষণ করেন। হিমাগার কর্তৃপক্ষের পক্ষে অল্প সময়ে এসব যাচাই করে আলু মজুদ করা সম্ভব নয়।

একইভাবে হিমাদ্রি হিমাগারের ব্যবস্থাপক মো. এনামুল হক বলেন, চলতি মৌসুমে বিদ্যুতের সমস্যা ছিল। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। তার পরও কিছু আলু নষ্ট হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফতাব হোসেন বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক ধান, ভুট্টা ও গমের পাশাপাশি আলু উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। গত মৌসুমে জেলায় ২৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়। এ থেকে আলু উৎপাদন হয় ৫ লাখ ২৭ হাজার ৮০০ টন। সংরক্ষণের জন্য যথাযথভাবে আলু রাখতে হবে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায়। এক্ষেত্রে কৃষক ও হিমাগার কর্তৃপক্ষ উভয়েরই সচেতন হতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন