দেশের ব্যাংকিং খাত দুর্দশায় আটকে আছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। বিদ্যমান ব্যাংকিং ব্যবস্থায় উচ্চ প্রবৃদ্ধির টেকসই লক্ষ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এছাড়া রাজস্ব আহরণে প্রতিকূলতার পাশাপাশি আছে পুঁজিবাজারের সংকট। রেমিট্যান্স ইতিবাচক থাকলেও, ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো (প্রথম প্রান্তিক) রফতানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে আগামীতে বড় ধরনের চাপের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের
(সিপিডি)
‘স্টেট অব বাংলাদেশ ইকোনমি’ শীর্ষক প্রেস
ব্রিফিংয়ে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এ
ব্রিফিংয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে পর্যালোচনা
উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষকরা।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের রাজস্ব খাত, ব্যাংক, পুঁজিবাজার
এবং বৈদেশিক লেনদেনের সার্বিক অবস্থা উপস্থাপন করা হয়। এ চারটি বিষয়ের ওপর
পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন যথাক্রমে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী
পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড.
খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিপিডির সম্মাননীয়
ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান। সামগ্রিক বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব ও
মতামত তুলে ধরেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড.
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
রাজস্ব খাত নিয়ে উপস্থাপনায় তৌফিকুল
ইসলাম খান বলেন, অর্থনীতি যে হারে বড় হচ্ছে রাজস্ব আহরণ সে হারে বাড়ছে না। সপ্তম
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী জিডিপির ১৪ শতাংশ রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জন
সম্ভব হবে না। সরকারও এটা মেনে নিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে জিডিপির ১৫ শতাংশ রাজস্ব
আহরণ হয়, আমাদের মাত্র ৯ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে আরো একটি পরিবর্তন দেখেছি—জিডিপি যেভাবে
বাড়ছে, আয়কর আহরণ সেভাবে বাড়ছে না। রাজস্ব আহরণ ঘাটতিকেই বড় উদ্বেগের বিষয় বলে
উল্লেখ করেন তিনি।
ব্যাংকি খাতের অবস্থা নিয়ে ড. ফাহমিদা
খাতুন বলেন, ব্যাংকিং খাত হতাশাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ খাতের ভঙ্গুরতা এমনভাবে চলছে
অথচ এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি
প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন,
প্রবৃদ্ধি এখন সুতা কাটা ঘুড়ির মতো। বাস্তবতার
সঙ্গে সুতার যে সংযোগ থাকে,
সেটা এখানে নেই। বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২-২৩
শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। অথচ প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৮ শতাংশ হয়েছে। বেসরকারি খাতের
ঋণপ্রবাহও সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে কম। আবার ব্যক্তিরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।
তারা বলছেন, লাভ করতে পারছেন না। পুঁজিপণ্য আসা নেতিবাচক হয়ে গেছে।
সরকারি পর্যায়ে যারা প্রবৃদ্ধি গণনা
করেন, তাদের প্রকাশ্যে এসে তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়নের ভিত্তিতে উপস্থাপনের আহ্বান জানান দেবপ্রিয়
ভট্টাচার্য।