আঞ্চলিক বিরোধিতা সত্ত্বেও আরসিইপি নিয়ে আশাবাদী আসিয়ান নেতারা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতের নতুন দাবি নিজেদের মতভেদের মধ্যেই বিশ্বের বৃহত্তম আঞ্চলিক চুক্তি সম্পাদনের দিকে এগিয়ে যেতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে আলোচনা করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নেতারা। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর বৈশ্বিক অর্থনীতি যে দুর্দশায় পড়েছে, তা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত চুক্তিটি করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। খবর সিএনবিসি, রয়টার্স, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

চীন সমর্থিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) গঠনে শনিবার ব্যাংককে বার্ষিক সম্মেলন শুরু করে ১০ সদস্যের অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) গতকাল ছিল সম্মেলনের শেষদিন। আসিয়ান সদস্য ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ভিয়েতনাম ছাড়াও ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড দক্ষিণ কোরিয়া আরসিইপির অন্তর্ভুক্ত। আসিয়ান সদস্যদের সঙ্গে চুক্তিটির নেতৃত্বে রয়েছে চীন। বৈশ্বিক জিডিপির এক-তৃতীয়াংশে অবদান রয়েছে দেশগুলোর। এছাড়া বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বাস করে অঞ্চলে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সংরক্ষণবাদের পাল্টা জবাব হিসেবে আরসিইপির প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কিন্তু মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মতবিরোধ আসিয়ানের ঐক্যবদ্ধ থাকার ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এর বাইরেও চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে আসিয়ানের ১০ সদস্যের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

উল্লেখ্য, বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্যের বিরোধিতা করে আসছে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া সিঙ্গাপুর।

সম্মেলনের প্রথম দিন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উচিত নিজেদের ৬৫ কোটি মানুষের সম্মিলিত বাজারের শক্তিকে ব্যবহার করা এবং বর্তমান সংরক্ষণবাদের যুগে যাতে বাজারটির সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হয়, সে বিষয়েএক সুরেকথা বলা।

সম্মেলনে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে কর্মকর্তারা প্রস্তাবিত আরসিইপি নিয়ে একটি প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছার আশা প্রকাশ করেছেন। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনীতে থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চ্যান ওচা বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বাণিজ্য বিনিয়োগকে উদ্দীপ্ত করার জন্য চলতি বছরের মধ্যে আরসিইপির আলোচনা সমাপ্ত করতে আমাদের কাজ করে যাওয়া উচিত।

সময় তিনি অঞ্চলটিরবাণিজ্য বিরোধ ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বাণিজ্য উত্তেজনার কারণ চলতি বছর অঞ্চলটির প্রবৃদ্ধি পাঁচ বছরের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে।

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেও ক্রমবর্ধমান সংরক্ষণবাদ বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করে বলেন, আসিয়ানকে অবশ্যই আরসিইপির মতো কংক্রিট কর্মসূচি প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর অর্থনৈতিক সংহতিকে ত্বরান্বিত করতে হবে।

তবে শেষ মুহূর্তে ভারতের উত্থাপিত দাবি আরসিইপির ভবিষ্যৎ নিয়ে ঝুঁকি তৈরি করেছে। আরসিইপির ফলে চীনা আমদানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। নয়াদিল্লির দাবি সম্পর্কে জানেন এমন এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে ভারতের উত্থাপিত নতুন দাবিগুলো পূরণ করা কঠিন হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যাংকক পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, আরসিইপি নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু ভারতের বিশাল বাজার উন্মুক্ত করতে হলে অবশ্যই অঞ্চলে একই সমান বাজার উন্মোচন করে দিতে হবে; যেখানে ভারতে ব্যবসা লাভবান হবে বলে যোগ করেছেন তিনি।

এদিকে বেশকিছু দেশ ভারতকে ছাড়াই চুক্তি এগিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা তুলে ধরেছে। তবে গতকাল থাই বাণিজ্যমন্ত্রী জুরিন লক্ষণাওয়াস্তি জানান, ভারত চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায়নি। এছাড়া আরসিইপির আলোচনাও ভালো চলছে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে প্রথম আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন