সংসদ ভবন

দেশীয় স্থাপত্যে আধুনিকতার প্রতিভূ

যায়নাব ফারুকী আলী ,হুরায়রা জাবীন, ইমন চৌধুরী

১৯৬২ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) রাজধানী হিসেবে ঢাকায় সংসদ ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর এর নকশা প্রণয়নের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি লুই আই কান নিযুক্ত হন। ১৯৭৪ সালে মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত তিনি এর নকশা প্রণয়নের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। প্রথম থেকেই ভবন, সর্বোপরি পুরো প্রকল্পটি আধুনিকতার প্রতিভূ হিসেবে নির্মিত হয়েছে। পাশ্চাত্য ধারার দার্শনিক চিন্তা-চেতনা নির্মাণশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে নকশা। ১৯৬৬ সালে এর নির্মাণ শুরু হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কারণে নির্মাণকাজ দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপটে এর নকশা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসে। ১৯৮৩ সালে এর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়।

আমাদের সংসদ ভবন এলাকার নকশা প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার শিক্ষার্থীদের লুই কান বলেছিলেন, ‘ নকশা প্রণয়নের তৃতীয় দিন রাতের বেলা হঠাৎ একটি ভাবনায় আমি শয্যা ত্যাগ করি এবং সেই ভাবনাটাই নকশা প্রণয়নের মূল ভাব হয়ে যায়। আমি উপলব্ধি করি, সমাবেশ কক্ষটিকে হতে হবে প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণের স্থান। সবাই সমাবেশস্থলে এসে জনসাধারণের চেতনাকে স্পর্শ করতে পারবে এবং পুরো কক্ষটিতে অবশ্যই ভাব প্রকাশিত হবে। দেশের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব লক্ষ করে আমার মনে হয়েছে যে সমাবেশ কক্ষের স্থানিক পরিকল্পনার মাঝে মসজিদের নিবিড় উপস্থিতি মূল্যবোধকে আরো স্পষ্টরূপে প্রকাশ করবে (ব্রাউনলি এবং ডিলং, ১৯৯১)

প্রথম থেকেই সমাবেশ কক্ষের অন্তর্নিহিত ভাব প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে একে একটি ধর্মীয়সুলভ গাম্ভীর্যপূর্ণ রূপ প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি সচেতন ছিলেন। ধর্মীয় চেতনাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি এমন একটি চেতনা, যা কিনা সচরাচর ব্যক্তিদের সংঘবদ্ধ হয়ে একটি উপাসনা ঘর নির্মাণে অথবা দেশ যোগ্য আইন প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করে...একে এক ধরনের আত্মীয়তাও বলা যায়, কারণ স্থাপত্য একটি বিশেষ আবরণ তৈরি করে। আর আবরণের এমন একটি শক্তি রয়েছে, যা কিনা যারা এর ভেতরে প্রবেশ করবে তাদের আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ করবে (কান, ১৯৫৩; ব্রাউনলি ডিলং, ১৯৯১)কান সচরাচর একে এমনভাবে বলেছেন, ‘ সমাবেশ কক্ষ হলো ধর্মীয় পরিবেশে আইন প্রণয়নের গৃহ’, যা কিনা তার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভূত সমাবেশ কক্ষের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধকে প্রকাশ করে (কারটিস, ১৯৯৩)

বিবিধ চেতনা উদাহরণ ভবনের নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বিষয়ে তার বক্তব্য হলো, ‘সমাবেশস্থলটিই প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এটি রাজনীতিবিদদের উত্কর্ষ প্রদর্শনের স্থান। এটি পুরো জাতিসত্তা বিনির্মাণ কিংবা পুনর্গঠনের ক্ষমতা রাখে (লাতুর, ১৯৯১)

১৯৫৫ সালে কান যখন আদাথ জেসুরান সিনাগগের নকশা করেছিলেন, তখনই প্রথম সমাবেশস্থল নিয়ে তার গভীর ভাবনা প্রকাশ পেয়েছিল। তার মতে, ‘এটি এমন একটি স্থান, যা হতে চায়, যেমন করে একটি বড় বট গাছের নিচে একটি সমাবেশস্থল হয়ে যায় (দোশি, ১৯৯২)

চেতনা ভারতের প্রাচীন এমনকি বর্তমান সময়ের লোকজ রীতির সমাবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য প্রকাশ করে।

কান আরো বলেছেন, ‘রোমান বৃহৎ হাম্মামখানা কারচালা থেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত হয়ে এর দীর্ঘায়িত ব্যঞ্জনায় তিনি ভবনকে মূর্ত করেছেন। এর কেন্দ্রে রয়েছে সমাবেশস্থল বা সংসদ কক্ষ। যেন এক আঙিনা, যাকে ঘিরে একের পর এক স্থানিক আবরণ তৈরি করা হয়েছে। এখানে রয়েছে চেতনাস্থল, বিশ্রামস্থল, প্রস্বানস্থল অথবা এমন অনেক স্থল, যেখান থেকে অমরত্বের স্বাদ পাওয়া যাবে। এমন চিন্তা

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন