দিনরাতের টেস্ট ম্যাচ

অস্ট্রেলিয়ার বেলায় না, তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ সেকেন্ডেই রাজি কোহলি!

গেল বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যাডিলেডে দিন-রাতের টেস্ট খেলতে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি অসম্মতি জানালেও এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে দিন-রাত টেস্ট খেলতে মাত্র তিন সেকেন্ডে রাজি হয়েছেন। এমন তথ্য জানালেন ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বিসিসিআইয়ের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি। গতকাল শনিবার তিনি দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে এমন প্রস্তাব দেওয়ার পর রাজি হতে মাত্র তিন সেকেন্ড সময় নিয়েছিল।’

প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক পূর্ণাঙ্গ সিরিজে অংশ নিতে সাকিববিহীন টিম বাংলাদেশ এখন ভারতে। আজ দিল্লিতে প্রথম টি২০ খেলতে মাঠে নামবে মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকরা। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২২-২৬ নভেম্বর ভারতের মাটিতে গোলাপী বলে এবারই প্রথম দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ খেলতে ভারতের বিপক্ষে মাঠে মানবে টিম টাইগার। বাংলাদেশ টিমের ভারত সফরের মাত্র এক সপ্তাহ আগেই বিসিসিআইয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সৌরভ। তিনিই বছর তিনেক আগে টেকনিক্যাল কমিটির চেয়াম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে ঘরোয়া পর্যায়ে গোলাপি বলের প্রবর্তন করেছিলেন।

শনিবার সাবেক আম্পায়ার সাইমন টাফেলের একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কলকাতার ‘মহারাজ’ বলেছিলেন, দিন-রাতের টেস্টের বিষয়ে সম্মতি জানাতে বিরাট কোহলি মাত্র তিন সেকেন্ড সময় নিয়েছিল।ভারতের সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি বিরাটের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা বলেছিলাম। আমি ওকে বলেছিলাম যে, আমাদের দিন-রাতের টেস্ট খেলতে হবে। আর বিরাট তিন সেকেন্ডের মধ্যে আমার দেওয়া প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। আমার প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোহলি বলে- অবশ্যই, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ঠিক আছে আমরা খেলব।’

কিন্তু এমন কী হল যে কোহলি মাত্র তিন সেকেন্ডেই দেশের মাটিতে পিঙ্ক বল টেস্ট আয়োজনে সম্মতি জানিয়ে দিলেন? ভারতের উত্তরে নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি সত্যি জানি না অতীতে কী হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোহলি দিন-রাতের টেস্ট খেলার বিষয়ে দারুণভাবে মুখিয়ে রয়েছে বলেই মনে হল। হয়তো ও ভেবেছে ফাঁকা গ্যালারিতে ম্যাচ আয়োজন টেস্ট ক্রিকেটের পক্ষে ভালো দেখায় না।’

মূলত সদ্য শেষ হওয়া ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের তিনটি ম্যাচই কার্যত অনুষ্ঠিত হয়েছে ফাঁকা গ্যালারিতে। রাঁচিতে শেষ টেস্ট খেলে উঠেই যা নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দেশের মাটিতে নির্দিষ্ট কয়েকটি ভেন্যুতে টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি। ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটা’র মতে, দিন-রাতের টেস্ট ক্রীড়াপ্রেমীদের ফের মাঠমুখো করে তুলবে। 

সৌরভের কথায়, ‘আমি জানি টি-২০ ক্রিকেটে গ্যালারি কানায়-কানায়  পূর্ণ থাকে। কিন্তু উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা টেস্ট ক্রিকেটেও দর্শক ফিরিয়ে আনতে পারে। এটা ভারতের জন্য শুরু। আমার মনে হয় এই চিন্তা-ভাবনা টেস্ট ক্রিকেটকে তার পুরনো জৌলুস ফিরিয়ে দেবে।’ 

গেল বছর অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে দিন-রাতের টেস্ট খেলার বিপক্ষে ছিল কোহলি। এমনকি রাতের টেস্ট খেলতে একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ভারতের বর্তমান ক্রিকেট অধিনায়ক। তবে তিনি এখন বুঝতে পেরেছেন যে টেস্টের যে মন্দা চলছে, তাতে এমন সিদ্ধান্তে বহাল থাকা ঠিক হবে না। গাঙ্গুলি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘দিন-রাত টেস্ট এমন সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা উপ-মহাদেশের টেস্ট ক্রিকেটকে আবারো জনপ্রিয়তা ফেরাতে সাহায্য করবে। আমি জানি টি-টোয়েন্টি প্রতিটি ম্যাচ মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টেস্টকেও এমন জাগয়ায় নিয়ে আসতে হবে। আর দিনরাতের এই খেলা তাতে সহযোগিতা করবে।’

গাঙ্গুলি আরো বলেন, ‘এখন মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসছে। মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে, অফিস সময়ে বাইরে সময় দেওয়াও কঠিন। সেজন্যই আমাদেরই অফিস সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেশির ভাগ সময় পরিবর্তন ভালো ফল নিয়ে আসে। উন্নয়নও পরিবর্তনের তাগিদ দেয়।’

তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি গোলাপী বলকে জনগণের মাঝে আবার ফিরে আসবে এবং টেস্ট ক্রিকেটকে আরও বেশি জনপ্রিয় করতে সহায়তা করবে। এসময় তিনি ২০০১ সালে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৭১ রানে ভারতের বড় জয়ের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘সেটা আমার ১০০তম টেস্ট ছিল। টেস্ট ক্যারিয়ারে সেই অবস্থানটি অর্জন করা অনেকটায় ভাগ্যোর ব্যাপার। প্রথম দিন টেস্ট ম্যাচে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আগামী দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচেও এমন লোক সমাগম হওয়া কবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মহারাজের কথায়, ‘আমি জানি টি-২০ ক্রিকেটে গ্যালারি কানায়-কানায় পূর্ণ থাকে। কিন্তু উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা টেস্ট ক্রিকেটেও দর্শক ফিরিয়ে আনতে পারে। এটা ভারতের জন্য শুরু। আমার মনে হয় এই চিন্তা-ভাবনা টেস্ট ক্রিকেটকে তার পুরনো জৌলুস ফিরিয়ে দেবে।’ 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন