বাংলাদেশ-ভারত প্রথম টি২০

প্রতিকূল পরিবেশে মাঠে নামছে টাইগাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পরিস্থিতি যতটা খারাপ হতে পারত, এখন ঠিক ততটাই খারাপ। বিশ্বকাপের পর হারানো মাঠের ছন্দ এখনো খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপর যুক্ত হলো ক্রিকেটারদের আন্দোলন। তার রেশ কাটার আগে নেমে এল আরো বড় আঘাত। নিষেধাজ্ঞার মুখে সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই ভারত সফর থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। ইনজুরি কেড়ে নিল মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকেও। খর্বশক্তি ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত এক দল নিয়েই ভারত সফরে যেতে হলো বাংলাদেশকে। আচমকা ধাক্কার পর অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড গেল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছে। কিন্তু প্রবাদে আছে, বিপদ কখনো একা আসে না। তাই দলের ভেতরকার টালমাটাল অবস্থার সঙ্গে যুক্ত হলো দিল্লির বায়ুদূষণের যন্ত্রণাও। ধোঁয়া ও ধুলোয় বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে চালাতে হলো প্রস্তুতি। গত কয়েক দিন মাস্কের আড়ালে নাক-মুখ ঢেকে কেউ কেউ বাঁচার চেষ্টা করলেন। অভিযোগ না থাকলেও কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানালেন, পরিবেশ আদর্শ নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্টেডিয়ামের আশপাশে পানিও ছিটানো হয়েছে। সব মিলিয়ে বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেই আজ সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। তবে অবস্থা যতই প্রতিকূল হোক, এ ম্যাচে জয়কেই পাখির চোখ করবে বাংলাদেশ। এ মুহূর্তে দারুণ একটি জয়ই পারে সব দুর্যোগ ভুলিয়ে দিতে।

ঘরের মাঠে ভারত বরাবরই শক্তিশালী দল। সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের সেরা ছন্দেও আছে দলটি। এমন অবস্থায় নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করতে হবে বাংলাদেশকে। টাইগারদের জন্য সুখবর, এ সিরিজে নেই ভারতীয় অধিনায়ক ও বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। তার পরিবর্তে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সামলাচ্ছেনহিট ম্যান রোহিত শর্মা। কোহলি ছাড়াও এ সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে ফেভারিট হিসেবে মাঠে নামবে ভারত। যদিও এরই মধ্যে বাংলাদেশকে সমীহ করার কথা জানিয়েছেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক। তবে জিততে হলে মাঠের লড়াইয়েই বাজিমাত করতে হবে বাংলাদেশকে।

এ সিরিজে প্রথমেই বাংলাদেশকে বাড়তি নজর দিতে হবে ওপেনিংয়ে। তামিম না থাকায় লিটন দাসের সঙ্গে সৌম্য সরকারকেই হয়তো দেখা যাবে শুরুতে। অবশ্য অফ ফর্মে থাকা সৌম্যকে নিয়েও আছে দুশ্চিন্তা। এ সিরিজে বাংলাদেশকে ভালো কিছু করতে হলে দায়িত্ব নিতে হবে সৌম্যকে। এরপর তিন নম্বরে সাকিবের বিকল্প হিসেবে হয়তো আফিফ হোসেনকে দেখা যেতে পারে। তবে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না মোহাম্মদ নাঈম ও মোহাম্মদ মিঠুনের সম্ভাবনাও। একাদশে সুযোগ পেলে উপরে উঠে আসতে পারেন তারাও। ব্যাটিংয়ে অবশ্য সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব থাকবে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর কাঁধে। বিশেষ করে পঞ্চ পাণ্ডবের তিনজনই অনুপস্থিত থাকায় মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর দিকেই তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। এর আগে টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে কাছাকাছি গিয়ে ১ রানে ম্যাচ হারার যন্ত্রণা নিশ্চয়ই এখনো তাড়া করে ফেরে এ দুজনকে। সেই যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমানোর সুযোগ দিচ্ছে এ ম্যাচ। সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য মাহমুদউল্লাহ জোর দিয়েছেন তরুণদের সুযোগ কাজে লাগানোর ওপর। পাশাপাশি নিজেদের মাঠে ভারত যে সবসময় শক্তিশালী দল, সেটিও অস্বীকার করেননি তিনি। সব মিলিয়ে মাহমুদউল্লাহর জন্য এ সিরিজ কঠিন এক অগ্নিপরীক্ষাই হতে যাচ্ছে।

এদিকে ম্যাচের আগে স্পিন বোলিং নিয়েও ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এখানেও সাকিবকে হারানোর হাহাকার। দিল্লির উইকেট স্পিনারদের কিছুটা বাড়তি সুবিধা দিয়ে থাকে। এ ম্যাচেও তেমনটা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ হয়তো এ ম্যাচে একাধিক স্পিনার নিয়ে মাঠে নামতে পারে। যেখানে তাইজুল ইসলাম ও আরাফাত সানীর সঙ্গে থাকতে পারেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবও। ত্রিদেশীয় সিরিজে আমিনুলের পারফরম্যান্স কিছুটা হলেও আশাবাদী করেছে বাংলাদেশকে। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন পর হয়তো মিটতে যাচ্ছে লেগ স্পিনার না থাকার আক্ষেপও। এছাড়া ব্যাট হাতেও ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে তার। পেস বোলারদের মাঝে মুস্তাফিজুর রহমান ও শফিউল ইসলামকে হয়তো একাদশে দেখা যাবে। তাদের কাঁধেও থাকছে গুরুদায়িত্ব। এ ম্যাচে জয়ের জন্যই মাঠে নামবেন বলে জানিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, ‘আমরা কাল (আজ) মাঠে নেমে ম্যাচ জেতার ওপর মনোযোগ দিচ্ছি।

অন্যদিকে ফেভারিট হিসেবে নামলেও এ ম্যাচে বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত। সাকিব-তামিম না থাকলেও ভারতকে হারানোর ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে বলেই মনে করছেন তিনি। অবশ্য এখন পর্যন্ত টি২০-তে আট ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে একটিতেও হারেনি ভারত। দিল্লির বায়ুদূষণসহ নানা ইস্যুতে নাকাল বাংলাদেশ যদি এ ইতিহাস বদলাতে চায়, তবে অসাধারণ কিছুই করে দেখাতে হবে এ ম্যাচে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন