অ্যাডামস ডাইভারসিফায়েড ইকুইটি

মেহেদী হাসান সবুজ

গত সপ্তাহেই ১৯২৯ সালের শেয়ারবাজার ধসের ৯০ বছর পূর্তি হলো। ১৯২০-এর দশকের শুরুতে শেয়ারবাজারে যে উত্থান দেখা দিয়েছিল, এ ধসের মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটে। ধসের পর বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে দেখা দেয় মহামন্দা। এ সময় শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত বহু কোম্পানি, বিশেষ করে বহু মিউচুয়াল ফান্ড ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। মহামন্দার কঠিন সময়কে পরাস্ত করে টিকে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি মিউচুয়াল ফান্ডের একটি অ্যাডামস ডাইভারসিফায়েড ইকুইটি ফান্ড (এডিএক্স)

পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন অনেকে। শেয়ারবাজারে সফল হতে চাইলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞ। অ্যাডামস ফান্ডের টিকে থাকার পেছনে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৯২৯ সালের শেয়ারবাজার ধসের মাসেই ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের অ্যাসেট নিয়ে যাত্রা করে অ্যাডামস ফান্ড। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মাধ্যমে ধসকে উতরে টিকে যায় ফান্ডটি।

অ্যাডামস ফান্ড হলো একটি ক্লোজড-এন্ড ফান্ড। এ ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডের নির্দিষ্টসংখ্যক শেয়ার থাকে এবং অন্যান্য শেয়ারের মতোই এগুলোর লেনদেন করা যায়। ১৯২৯ সাল থেকে অ্যাডামস ইকুইটি ফান্ডের বার্ষিক রিটার্নের পরিমাণ গড়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ।

পারফরম্যান্স ধরে রাখার পেছনের নানা কৌশল নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা করেছেন ফান্ডটির জ্যেষ্ঠ কর্মী মার্ক স্টোকলে। চার বছর ধরে ফান্ডটিতে পোর্টফোলিও ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। শক্তিশালী শেয়ার বাছাইয়ের কারণেই ফান্ডটি দীর্ঘমেয়াদে ধরে পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পেরেছে বলে মনে করেন স্টোকলে। বর্তমানে ফান্ডটির শীর্ষ হোল্ডিংসের মধ্যে রয়েছে মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, অ্যাপল ও ভিসা। অ্যাডামস ফান্ডের সফলতার কয়েকটি মূল সূত্র সম্পর্কে জানিয়েছেন সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার স্টোকলে।

খাত বাছাইয়ের পরিবর্তে শেয়ার বাছাই

শেয়ার কেনার সময় অনেক বিনিয়োগকারী কিছু নির্দিষ্ট খাতকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। অ্যাডামস ফান্ড এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। শেয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ফান্ডটি সবসময় খাতনিরেপক্ষ থাকার চেষ্টা করে। অ্যাডামস ফান্ডের পোর্টফোলিও ম্যানেজাররা প্রতিটি খাতের ভালো কোম্পানিগুলো বাছাই করে থাকেন। কোম্পানির বিনিয়োগকৃত মূলধনের বিপরীতে রিটার্নসহ বেশকিছু ফ্যাক্টরকে শেয়ার বাছাইয়ের সময় তারা বিবেচনায় নিয়ে থাকেন।

ফান্ডটির কাছে রয়েছে একটি কোয়ান্টিটেটিভ মডেল। এর মাধ্যমে শেয়ারের মান, ভ্যালুয়েশন ও মোমেন্টামের ওপর নজর রাখা হয়। এছাড়া প্রতিটি খাতের প্রতিটি শেয়ারের র্যাংকিং করা হয়। কোয়ালিটি ও টাইমিংকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন ফান্ডটির ম্যানেজাররা। শেয়ার বাছাইয়ের সময় কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করার পাশাপাশি কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সব কনফারেন্সে উপস্থিত থাকেন অ্যাডামস ফান্ডের ম্যানেজাররা। উপাত্তকেই শেয়ারের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রাধান্য দিয়ে থাকে ফান্ডটি।

পোর্টফোলিওতে একক শেয়ারের প্রাধান্য না থাকা

কোনো একটি শেয়ার বেশি ভালো করলে অনেক বিনিয়োগকারীই সে শেয়ারের প্রতি অতিমাত্রায় ঝুঁকে যান। অ্যাডামস ফান্ডের ম্যানেজাররা কখনই পোর্টফোলিওতে একটি নির্দিষ্ট শেয়ারকে খুব বেশি বড় হওয়ার সুযোগ দেন না। তারা সবসময় পোর্টফোলিওকে নতুন করে সাজিয়ে তোলেন। কোনো একটি শেয়ারের প্রতি বেশি না ঝুঁকে বেশকিছু শেয়ারকে কাছাকাছি অবস্থানে বিন্যস্ত করেন।

অ্যাডামস ফান্ডের বিনিয়োগ আদর্শের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা। এর অংশ হিসেবেই একটি নির্দিষ্ট শেয়ারের দিকে ঝোঁকা থেকে বিরত থাকে ফান্ডটি। ফান্ডটির ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আরেকটি অংশ হলো খারাপ পারফর্ম করা শেয়ারগুলোর ব্যবস্থাপনা। যদি কোনো একটি শেয়ারের দর এক বছরের সর্বনিম্নে নেমে যায়, এক্ষেত্রে হাতে থাকা শেয়ারের অর্ধেক বিক্রি করে দেয় ফান্ডটি। কোনো একটি নতুন শেয়ার কেনার সময় ফান্ডটি সাধারণত ওই খাতের অন্য একটি শেয়ার বিক্রি করে দেয়।

ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারে বাড়তি মনোযোগ

অ্যামাডস ফান্ড সবসময় বিশ্বাস করে যেকোনো অনিশ্চয়তার মধ্যেও তারা ভালো করতে পারবে। যেকোনো ঝুঁকির মধ্যে ফান্ডটি ভালো শেয়ার বাছাই করার সক্ষমতা রাখে। কোনো বড় ধরনের অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হলে ফান্ডটি খুব সতর্কতার সঙ্গে পোর্টফোলিওর সামগ্রিক ঝুঁকির পরিমাণ মূল্যায়ন করে এবং সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারগুলোর দিকে বাড়তি মনোযোগ প্রদর্শন করে।

বিনিয়োগ ও ঝুঁকি-সহনশীলতার সমন্বয়

যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন অ্যাডামস ফান্ডের ম্যানেজাররা। ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে বিনিয়োগ থেকে সরে আসাকে তারা কখনই সমর্থন করেন না। তবে এ সময় নিজের সঙ্গে নিজের সবচেয়ে বেশি স থাকার চেষ্টা করেন অ্যাডামস ফান্ডের পোর্টফোলিও ম্যানেজাররা। প্রথমত, তারা চেষ্টা করেন নিজেদের ঝুঁকি নেয়ার সত্যিকার সক্ষমতা নিরূপণ করতে। পরবর্তী সময়ে সে অনুযায়ী অ্যাসেট ক্লাস বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তারা। যদিও রিস্ক প্রোফাইলের পরিবর্তনের সঙ্গে প্রতি বছরই বিনিয়োগ ও ঝুঁকি-সহনশীলতার মধ্যে সমন্বয় করে ফান্ডটি।  

                 

মানি ডটকম অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন