সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু, প্রথম দিনই গেলেন ১১০০ পর্যটক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি কক্সবাজার

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে নৌপথে যাওয়ার পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে গতকাল। প্রথম দিনেই জাহাজ কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, আটলান্টিক ক্রুজ ও এমভি ফারহান নামে তিনটি জাহাজে করে প্রায় ১ হাজার ১০০ পর্যটক সেন্ট মার্টিন গেছেন। এর মধ্যে চার শতাধিক পর্যটক রাতযাপন করতে সেন্ট মার্টিন থেকে যান বলে জানিয়েছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সেন্ট মার্টিনে রাতযাপন নিষিদ্ধ, দ্বীপে চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে দুটিতে নামিয়ে আনা এবং অনলাইনে নিবন্ধন করে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০ পর্যটক দ্বীপে যাওয়াসহ স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেন্ট মার্টিন দ্বীপ রক্ষায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ওই সভায় সিদ্ধান্তগুলো ১ মার্চ থেকে বাস্তবায়নের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু

সিদ্ধান্ত নেয়ার এক বছর পার হলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন জাহাজের টেকনাফের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, সকাল সাড়ে ৯টার পর কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনে ২৯২, আটলান্টিক ক্রুজে ৩৮৪ ও এমভি ফারহানে ৩৮২ পর্যটক সেন্ট মার্টিন গেছেন। পরে বেলা ৩টার পর চার শতাধিক পর্যটক রাতযাপন করতে সেন্ট মার্টিন থেকে গেলেও অধিকাংশ পর্যটক টেকনাফে চলে এসেছেন।

তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও পর্যটন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আফসার বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ রক্ষায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো চিঠি আমরা পাইনি। তাই আগের নিয়মেই সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত ব্যবস্থা চলছে।

তিনি বলেন, জাহাজ চলাচল শুরু হওয়া সেন্ট মার্টিনে হোটেল, কটেজসহ প্রতিটি আবাসিক ও খাবার হোটেলে মূল্যতালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জাহাজ কর্তৃপক্ষ যাতে কোনো ধরনের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করে এবং ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নির্দেশ দেয়া হয়। ভাটার সময় কোনো পর্যটক যাতে সেন্ট মার্টিন সৈকতের পানিতে না নামেন, সে ব্যাপারে প্রচারণা চালানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন দেয়। পরে ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিটি কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যান এবং অবস্থান করেন। এতে দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে। শুধু তা-ই নয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে নির্মাণ করা রাস্তায় দ্বীপটির ক্ষতি বাড়ছে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির স্বল্পমেয়াদি সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, দ্বীপটিতে মোটরসাইকেল, গাড়ি, স্পিডবোট চলাচল করতে পারবে না। সমুদ্রসৈকতটির ভাঙন রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এতে তীরের মহামূল্যবান প্রবালের ক্ষতি হচ্ছে এবং ভাঙন বাড়ছে। ওই ব্যাগ ফেলানো বন্ধ করতে বলেছে কমিটি। রাতে হোটেলগুলো বাতি জ্বালানোর ফলে কচ্ছপের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। তাই রাতে দ্বীপে আলো জ্বালানো যাবে না।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, নিষিদ্ধের পরিবর্তে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের রাতযাপন সীমিত করা হবে। এতে দ্বীপটির ওপর চাপ কমে আসবে।

তিনি মনে করেন, পর্যটকদের রাতযাপন হঠাৎ বন্ধ করে দিলে বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ স্থানীয়দের আয়ের একটি বড় উৎস পর্যটন। পর্যটকদের কেন্দ্র করে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান নির্ভর করে। তাছাড়া সেখানে অনেক হোটেল-মোটেলে বিনিয়োগ রয়েছে। এসব বিবেচনায় বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন