ভারতের এফএমজিইতে বাংলাদেশী মেডিকেলে পড়াদের হতাশাজনক নৈপুণ্য

চিকিৎসাশিক্ষার মানোন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

শর্তানুযায়ী বিদেশের মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নেয়া ভারতীয় নাগরিকদের দেশে চিকিৎসা পেশা চর্চার নিবন্ধন পেতে ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট এক্সামিনেশন (এফএমজিই) পাস করতে হয়। সুতরাং সংগত কারণেই দেশটির জাতীয় পরীক্ষা বোর্ডের (এনবিই) অধীনে পরিচালিত পরীক্ষায় প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক ভারতীয় অংশ নেন। সেখানে বাংলাদেশের মেডিকেল থেকে পাস করা স্নাতক যেমন থাকেন, তেমনি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মেডিকেল কলেজ থেকে উত্তীর্ণ স্নাতকও থাকেন। সম্প্রতি ২০১৫ থেকে ২০১৮এই চার বছরে এফএমজিইতে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের নৈপুণ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আলোচ্য বোর্ড। সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করাদের ৭২ শতাংশই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। এতে দেশে চিকিৎসা শিক্ষার নিম্নমানের বিষয়টি আবার স্পষ্ট হলো বৈকি। আমাদের চিকিৎসা শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন নতুন নয়। প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে বিষয়টি নিয়মিত বিরতিতে উঠে আসছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদরাও এটা নিয়ে অব্যাহতভাবে আক্ষেপ করে আসছেন এবং নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু মানে খুব একটা পরিবর্তন আসছে না। বরং দিন দিন মান তলানিতে ঠেকছে। ভারতীয় জাতীয় পরীক্ষা বোর্ডের উল্লিখিত প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্য অনেকটা তারই অনুরণন বলা চলে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের পূর্বশর্ত দক্ষ মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি। আর বিদ্যমান মানহীন শিক্ষা দিয়ে তা মোটেই সম্ভব নয়। কাজেই কারণ অনুসন্ধানপূর্বক চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়নে জোরদার পদক্ষেপ দরকার। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিএমডিসির সচেষ্টতা আশা করব।

বলার অপেক্ষা রাখে না, গত এক দশকে চিকিৎসার ভৌত অবকাঠামোয় লক্ষণীয় উল্লম্ফন ঘটেছে। সরকারি মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমান্তরালে দেশে বেড়েছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা। প্রতি বছর এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুলসংখ্যক মেডিকেল স্নাতক বের হচ্ছেন। কিছুদিন আগে বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, তাদের অধিকাংশই কাঙ্ক্ষিত মানের নয়। স্বাভাবিকভাবে তারা অনেক ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারছেন না। ফলে দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে একটি আস্থাহীনতার পরিবেশ। আস্থাহীনতার কারণে প্রতিনিয়ত দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক রোগী বাইরের দেশ, বিশেষত ভারতে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরির মাধ্যমে দেশে জনসাধারণের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে বিদেশনির্ভরতা হ্রাস এবং একটি আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা অসম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা শিক্ষার মান বাড়ানোর বিকল্প নেই।

অস্বীকারের উপায় নেই, সংখ্যায় বাড়লেও দেশের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এক্ষেত্রে মূল সংকট শিক্ষকস্বল্পতা। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয়ও একই অবস্থা। নির্ভরযোগ্য এক হিসাব অনুযায়ী, গড়ে ৬৩ শতাংশ কম শিক্ষক রেখেই চিকিৎসা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে মেডিকেল কলেজগুলো। বিশেষজ্ঞরা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। শিক্ষার মানে ধস নিম্নমানের চিকিৎসক তৈরির পেছনে এটিকে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে বিবেচনা করছেন তারা। আরেক সমস্যা হলো নিরীক্ষাগার সুবিধা শিক্ষা সরঞ্জামের ঘাটতি এবং আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোগত দুর্বলতা। পর্যাপ্ত অবকাঠামো, শিক্ষা সরঞ্জাম জনবলের নিশ্চয়তা ছাড়াই ঘোষণা দিয়ে একের পর এক মেডিকেল কলেজ খুলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কোনো কলেজের পরীক্ষা নেয়ার সুনির্দিষ্ট কক্ষ নেই, কোনোটির মিলনায়তন নেই, কোনোটির নেই গ্রন্থাগার, পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ, নিরীক্ষণ সরঞ্জাম ইত্যাদি। বলতে গেলে নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে চলছে নতুন-পুরনো মেডিকেল কলেজগুলো। কাজেই শুধু ঘোষণা দিয়ে কলেজ চালু করলে হবে না; এর জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন