ঢাবির সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ

চেয়ারম্যানের পদোন্নতিতে অনিয়ম!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া শর্ত পূরণ ছাড়াই পদোন্নতির অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জোবায়ের আলমের বিরুদ্ধে। বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে তার পদোন্নতির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, গত বছর ঢাবির সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের একটি স্থায়ী শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তে বলা হয়, ‘প্রার্থীদের অবশ্যই সমুদ্রবিজ্ঞান, মাত্স্যবিজ্ঞান/পানি প্রকৌশল, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি/অণুজীব বিজ্ঞান/প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান/সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে। পিএইচডি কিংবা সমমানের ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

এ পদের বিপরীতে আবেদন করেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান মো. জোবায়ের আলম। আবেদনে শিক্ষকতা যোগ্যতা হিসেবে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্স্যবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, কানাডার ভ্যাঙ্কুভার আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাত্স্যবিজ্ঞানে পোস্ট ডিগ্রি ডিপ্লোমা ও যুক্তরাষ্ট্রের কেলা গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট এমবিএ ডিগ্রি উল্লেখ করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে তিনি এমবিএ ডিগ্রির পাশে বন্ধনী দিয়ে লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ডিগ্রির সমমান হিসেবে। আবেদনপত্রে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জোবায়ের আলম ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত ও ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রভাষক পদে কর্মরত ছিলেন।

মাত্স্যবিজ্ঞান বা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত বিষয়ে কোনো উচ্চতর যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন মো. জোবায়ের আলম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্নাতকোত্তর ও ডিপ্লোমা ডিগ্রিকে উচ্চতর ডিগ্রি হিসেবে দাবি করেন মো. জোবায়ের আলম। তিনি বলেন, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি উচ্চতর একাডেমিক যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া আমি পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিপ্লোমা করেছি। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছি। তাই সবকিছু নিয়মের মধ্যেই হয়েছে।

যদিও ভিন্নমত পোষণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য। তারা বলছেন, যোগ্যতা হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ ডিগ্রি দেখিয়েছেন এমবিএকে। যদিও এমবিএর সঙ্গে সমুদ্রবিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘এ নিয়োগে স্পষ্ট অনিয়ম হয়েছে। উচ্চতর কোনো ডিগ্রি নেই, গবেষণা নেই। এমনকি ভালো কোনো পাবলিকেশন্সও নেই। কীভাবে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হলো। এ পদোন্নতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘শিক্ষকতা পেশায় স্নাতকোত্তর হলো এন্ট্রি লেভেলের ডিগ্রি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই এখন পিএইচডি ছাড়া নিয়োগ দেয় না। আর ডিপ্লোমা তো কোনো ডিগ্রিই না। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে ডিপ্লোমা ডিগ্রির কথা উল্লেখই থাকে না। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে এটি করে ভাবার বিষয়। বিভাগে বিভাগে দারোয়ান বসিয়ে তো এ অনিয়ম বন্ধ করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন