পদ্মার ভাঙন

রাজবাড়ীতে তিন বছরে বাস্তুচ্যুত ৩ হাজার ৬৬১ পরিবার

বণিক বার্তা প্রতিনিধি রাজবাড়ী

পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রাজবাড়ীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। কয়েকদিনের ভাঙনে ভিটেমাটি হারায় গোয়ালন্দ ও সদর উপজেলার ১ হাজার ৮টি পরিবার। এরও আগে গত আগস্টে চার উপজেলায় পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয় ৫৭২টি বসতঘর। এ ভাঙনে বিলীন হওয়া ফসলি জমির পরিমাণও নেহাত কম নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত তিন বছরে রাজবাড়ীতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৩ হাজার ৬৬১টি পরিবার। যাদের অধিকাংশই এখনো মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে যাপন করছে মানবেতর জীবন।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙনে সদর, গোয়ালন্দ ও পাংশা উপজেলার ১ হাজার ১৯টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়। ২০১৮ সালের ভাঙনে একইভাবে জেলায় বসতভিটা হারায় ১ হাজার ৬২টি পরিবার। আর এ বছর দুই দফা ভাঙনে সদর, পাংশা, গোয়ালন্দ ও বালিয়াকান্দিতে মোট বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে ১ হাজার ৫৮০টি পরিবারের। জেলা প্রশাসন থেকে এসব পরিবারকে সহায়তা দেয়া হয়েছে চাল, নগদ টাকা ও টিন।

তবে ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, আপাতত ভাঙন থামলেও আতঙ্ক কমেনি। জেলা প্রশাসন থেকে মাত্র ২০ কেজি করে চাল ছাড়া মেলেনি অন্য কোনো সহায়তা। অনেকে চালও পাননি। এ অবস্থায় ভিটেহারা হাজারো পরিবার নিঃস্ব অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

সরেজমিন গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ২ নং ফেরিঘাট এলাকায় দেখা যায়, এখানে ভাঙনকবলিত অন্তত ৫০টি পরিবার খুপরি ঘরে কোনোরকমে বসবাস করছে। এ সময় কাঞ্চন বেগম নামে এক নারী বলেন, বছর তিনেক আগে তিনি ভাঙনের শিকার হন। এরপর সিদ্দিক কাজীরপাড়া এলাকায় বছরে দেড় হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তিতে অন্যের জমিতে বসতি গড়েন। টিনের তৈরি দোচালা ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে দিন একেবারে খারাপ কাটছিল না। কিন্তু গত অক্টোবরের প্রথম দিকে পদ্মায় ভাঙন শুরু হলে ভিটেসহ সেই ঘর বিলীন হয়ে যায়। এরপর কয়েকদিন রাস্তার পাশে কাটানোর পর এখন ফেরিঘাট এলাকায় খুপরি ঘর তুলেছেন।

একই এলাকায় সত্তরোর্ধ্ব আব্দুল জলিল শেখ বলেন, ঢল্লাপাড়া এলাকায় তার ফসলি জমি ছিল। ছিল সুখের সংসার। কিন্তু বার বার ভাঙনে তিনি সবকিছু হারান। এ পর্যন্ত তিনি ভাঙনের শিকার হয়েছেন পাঁচবার। সর্বশেষ ভাঙনে বাকি যা ছিল তা-ও গেছে। এখন তিনি একেবারেই নিঃস্ব। কোথায় যাবেন, কী করবেন জানেন না।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, এ বছর ভাঙনে যারা বসতভিটা হারিয়েছেন তাদের সহায়তার চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ঘর তোলার মতো জমি থাকলে ভাঙনকবলিতদের টিন দেয়া হবে। এজন্য জেলা প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত টিন মজুদ আছে। তাছাড়া কোনো পরিবার যদি আশ্রয়ণ প্রকল্পে যেতে চায়, তাদের জন্য সে ব্যবস্থাও রয়েছে।

এদিকে পদ্মার ভাঙনে হাজারো বসতভিটার পাশাপাশি দৌলতদিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার দুটি ঘাট। ওই দুটি ঘাট এখনো চালু করা যায়নি।

বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দেয়ায় পদ্মার পানি বেড়ে যায়। এতে তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়া ঘাট ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে জিও ব্যাগ ফেলে কোনো রকমে ঘাটগুলো রক্ষা করেছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন