ফুটবলে ক্যাসিনো প্রভাব : অস্তিত্ব সংকটে আরামবাগ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্যাসিনো ঝড় অনেক হিসাব বদলে দিয়েছে। বদলেছে ক্রীড়াঙ্গনের হিসাবও, বিশেষ করে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে আরামবাগ ফুটবলারদের।

ইয়াংমেন্স ফকিরেরপুল, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ক্যাসিনো কাণ্ডে সবচেয়ে আলোচিত ক্লাব। ফকিরেরপুল ছাড়া বাকি তিনটি ক্লাব ঘরোয়া প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলে।  দল গড়তে বিপাকে তিন ক্লাবই। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা আরামবাগের।

আরামবাগ ছেড়ে রবিউল হাসান গেছেন বসুন্ধরা কিংসে। আরিফুর রহমানের নতুন ঠিকানা সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলবেন মানিক হোসেন মোল্লা। আরামবাগে খেলার কথা থাকলেও সিদ্ধান্ত বদলেছেন ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল। অভিজ্ঞ গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম হিমেল পড়েছেন খানিকটা বেকায়দায়। একটা সময় ভালো প্রস্তাব থাকলেও আরামবাগে থাকার পরিকল্পনায় তা গ্রহণ করেননি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট নতুন করে ভাবাচ্ছে একসময়কার নাম্বার-ওয়ান কিপারকে। হিমেলের মতো এমন অনেকেই এখনো  ঠিকানা চূড়ান্ত করেননি। নতুন মৌসুম সামনে রেখে দল খুঁজছেন তারা।

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অনেক ক্লাব স্বল্পমূল্যে পেয়ে গেছে কাঙ্ক্ষিত ফুটবলার। জরুরি অবস্থায় আরামবাগকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজানো ফুটবলারদের অনেকে আপস করছেন পারিশ্রমিক ও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে। আরামবাগের ফুটবলাররা ক্যাসিনো ঝড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আক্ষেপ হিমেলের কণ্ঠে।ক্যাসিনোর ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বোধকরি আরামবাগের খেলোয়াড়রা। আগামী মৌসুমের জন্য অনেকেই এ ক্লাব নিয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই ঠিকানা বদল করেছেন। বাকিদের এখনো হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে’— গতকাল বণিক বার্তাকে বলেন হিমেল।

২০১৮ সালের স্বাধীনতা কাপজয়ী আরামবাগ আসন্ন মৌসুমে সবাইকে চমকে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল। প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন দৌড়ে থাকার মতো দল গড়তে বিভিন্ন ফুটবলারকে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা অগ্রিম হিসেবে প্রদানও করেছিল ক্লাবটি। ক্যাসিনো ঝড়ের পর থেকে দেশছাড়া ক্লাবের সভাপতি মমিনুল হক সাঈদ; যিনি ক্লাব কার্যক্রমের প্রধান অর্থ সরবরাহকারী। এ কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন তো দূরের পথ, আগামী মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ক্লাবটির থাকার সম্ভাবনা ঝুলছে সুতোর ওপর।

আরামবাগ কর্মকর্তারা আসন্ন ফুটবল মৌসুমের দলবদল পিছিয়ে নিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) অনুরোধ করেছেন। তা অসম্ভব, জানিয়ে ক্লাবকে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় ফুটবল অভিভাবক সংস্থা বাফুফে। লিগে অংশগ্রহণ না করলে পরের মৌসুমে অবনমন হওয়ার কথা আরামবাগের। ক্লাব কর্মকর্তাদের আশাবাদ, আসন্ন লিগে আরামবাগ খেলতে না পারলেও বাফুফে কর্মকর্তারা দলটিকে শীর্ষ লিগে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

গতকাল আরামবাগ ক্লাবের সহসভাপতি এজাজ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, কোনোভাবে একটা দল গঠন করে যাতে শীর্ষ লিগে টিকে থাকা যায়। তা না পারলে বাফুফে কর্মকর্তারা হয়তো আরামবাগকে শীর্ষ লিগে রেখে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন। এ সম্পর্কে বাফুফের কম্পিটিশন্স ম্যানেজার জাবের বিন তাহের আনসারী বলেছেন, ‘আরামবাগ কর্মকর্তারা দলবদল পিছিয়ে নেয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু দলবদল কার্যক্রম একবার শুরু হয়ে গেলে তা পিছিয়ে নেয়ার বিষয়টি ফিফা আইনে অসম্ভব। আমরা তা আরামবাগ ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছি। আসন্ন লিগে আরামবাগ ক্লাব খেলতে না পারলে পরবর্তীতে তাদের শীর্ষ লিগে রাখার সুযোগ আছে কিনা?— জানতে চাইলে বাফুফে কম্পিটিশন্স ম্যানেজার বলেছেন, ‘শীর্ষ লিগে কারা খেলবে তা নির্ধারণ করার এখতিয়ার পেশাদার লিগ কমিটির আছে। লিগ কমিটির কর্মকর্তারা এ নিয়ে আলোচনা করে হয়তো সিদ্ধান্ত নেবেন।

ক্যাসিনো কাণ্ডে সম্পৃক্ত ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া গ্রেফতার হওয়ায় আগামী মৌসুম নিয়ে বিপাকে আছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবও।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন