প্রভাবশালীদের দখলে বাঁকখালী নদীর জমি

৯ বছরে নির্মাণ হয়নি প্রস্তাবিত নৌবন্দর

বণিক বার্তা প্রতিনিধি কক্সবাজার

কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদী দখল করে পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করেছেন মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক। প্যারাবন কেটে নদী দখলের অভিযোগে আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। শুধু খালেক নন, বাঁকখালী নদীর ওপর কস্তুরাঘাট এলাকায় অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর নির্মাণের প্রস্তাবিত জায়গা অবৈধ দখলে রেখেছে, এমন ৫১ জন দখলদারের একটি তালিকা তৈরি করেছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) অবৈধ দখলদারদের হাতে জমি থাকায় গেজেট প্রকাশের সাড়ে নয় বছরেও প্রস্তাবিত নদীবন্দর নির্মাণ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রফতানি সহজ করতে ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বাঁকখালী (কস্তুরাঘাট) নৌবন্দর স্থাপনে গেজেট প্রকাশ করা হয়। কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটকে নদীবন্দর ঘোষণাপূর্বক বিআইডব্লিউটিএকে নদীবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করাসহ বন্দর সীমানাও নির্ধারণ করা হয়। কস্তুরাঘাট থেকে মহেশখালী চ্যানেল পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ের ১ হাজার ২০০ একর জায়গাজুড়ে এ নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে কক্সবাজারের সদর উপজেলা অংশে ৮২১ একর এবং মহেশখালী উপজেলা অংশে ৪৪৭ একর জমি রয়েছে। তবে সবটুকুই সরকারি খাসজমি। এরই আলোকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও কানুনগো এবং বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল শাখা কর্তৃক যৌথ জরিপ কাজ সম্পন্ন করে। নৌবন্দরের জমি হস্তান্তরের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে একাধিকবার চিঠিও দেয় বিআইডব্লিউটিএ। তবে এখন পর্যন্ত এ জমি বিআইডব্লিউটিএকে হস্তান্তর না করায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নৌবন্দর নির্মাণের কাজ।

যে স্থানটি ঘিরে সরকার নদীবন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেয়, সে স্থানটিতে চলছে প্রভাবশালীদের দখলের মহোৎসব। বিআইডব্লিউটিএ ৫১ জন প্রভাবশালী দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে। এ তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারাও। তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছেন ইকবাল হাজি। তিনি অবৈধভাবে নদীবন্দরের জমিতে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন। পেশকার পাড়ার ফরিদ বন্দরের জায়গায় টিনশেডের ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। নাগু কোম্পানি নির্মাণ করেছে পাকা ভবন। ফ্লাওয়ার মিলস করেছেন বেদারুল আলম। দখলকৃত এলাকায় টিনশেড ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন পুরনো কস্তুরাঘাটের ফরিদুল আলম, পৌরসভা ঘাট এলাকার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাসেদুল হক, ৬ নং ঘাট এলাকার সিদ্দিক কোম্পানি, হাজি মো. ইউনুসের ছেলে মো. ভুট্টু, আহমেদ করিম, মো. রেজাউল করিম, মো. সেলিম, আবদুস সালাম, নতুন বাজার ৬ নং ঘাট এলাকায় হালিমা খাতুন, মো. সিদ্দিক, শামসুল আলম, কাউসার, এ কে রাশেদ হোসাইন, শওকত আলী, আবদুস সালাম, মহেশখালী পৌরসভা এলাকায় রশিদ মিয়া, কক্সবাজার পৌরসভা ঘাট এলাকায় নুরুহুদা ও থানা রোডে এসএম আতিকুর রহমান। এছাড়া আমিরুল ইসলামের রয়েছে অ্যাকোয়া কালার লি. নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সালেহ আহমেদ নামে এক ব্যক্তির রয়েছে মিডওয়ে নামে একটি মাছের হ্যাচারি। সাগর কোল্ড স্টোর, নয়ন ফিশারিজ, বিসমিল্লাহ সি-ফিশ, ফিশমার্ক প্রজেক্ট, মাইশা এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেডসহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন একাধিক দখলদার। এর মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী সি-পোর্ট, নুরুল ইসলাম পাটোয়ারীর মালিকানাধীন মেরিন ফিশ প্রসেসিং লি. এবং মো. সেলিম উল্লাহর ১০ একর জায়গার ওপর কাঁকড়ার প্রজেক্ট।

নদীর জমি দখলদারদের তালিকায় বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন কয়েকজন। এর মধ্যে একজন হলেন শাপলাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক। নদী দখলের অভিযোগ মাথায় নিয়েই আসন্ন ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। যদিও নদী দখলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের এক রায়ে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আব্দুল খালেক বলেন, যে জমিতে পাকা ভবন, টিনশেড ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করা হয়েছে, এটি দখল করা নয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলাও রয়েছে।

তালিকার বাইরেও বাঁকখালী নদী ঘিরে শত শত দখলদার রয়েছে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে সংকটে পড়বে নদী।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার বলেন, বাঁকখালী নৌবন্দর স্থাপনের সম্ভাব্য জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে যে স্থান ঘিরে নদীবন্দর হওয়ার কথা, সে স্থানে বেশকিছু দখলদার রয়েছে। যে কারণে জমি বুঝিয়ে দিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন